ছোটবেলা থেকেই স্বপ্নের আকাশে রঙ্গিন ঘুড়ি উড়িয়ে বড় হয়েছেন। আর বড় হয়েও সেই রং-এর নেশা তাকে আজও ছাড়েনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা স্কুল শিক্ষক হাজী মো সুজাবত আলী ও শেফালী আলীর তিন সন্তানের মধ্যে সাইফ সবার ছোট। ছোট বেলা থেকে ভালো ছাত্র হওয়ায় ছিলেন সবার আদরের। মেধাবী সাইফ অংকে কখনো ৯০ এর নিচে নম্বর পাননি। তার শৈশব কেটেছে ঈশ্বরদীতে।
প্রথমে পাইলট, ক্রিকেটার এরপর ফিজিক্স নিয়ে পড়ে সাইনটিস্ট হওয়ার ইচ্ছা। এভাবেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের ইচ্ছে আর পছন্দগুলোও বদলে যায়। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে বিজ্ঞান কলেজে পড়তে চলে আসেন ঢাকায়।
এইসএসসি পাশ করার পর বন্ধুরা সবাই যখন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে বুয়েট-মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ব্যস্ত এমন সময় ভবিষৎ ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এক আত্মীয়ের পরামর্শে আর মায়ের অনুপ্রেরণায় সাইফ ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অফ ডিজাইন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং এ্যান্ড টেকনোলজিতে পড়াশোনা শেষ করে ২০০৪ সালে দেশ সেরা ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স-এ কর্মজীবনের হাতে খড়ি। এরপর একে একে ট্রেন্ডজ, রিচম্যান, ইনফিনিটি, লুবনানে প্রধান ডিজাইনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফ্যাশন প্রেমীরা সাইফ সোহেলের কাছ থেকে সব সময়ই বৈচিত্র্যময় আনকোরা ডিজাইনের পোশাক পেয়ে থাকেন। তাইতো বড় বড় হাউসগুলো তৎপর থাকে সাইফকে নিজের প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনার হিসেবে পেতে।
জনপ্রিয় এই তরুণ ডিজাইনার এখন ফ্যাশন হাউস ডোরসের সিওও এবং চিফ ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন।
নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে তরুণদের চাহিদা মতো পোশাক তৈরির করে অনেকের কাছে আজ অনুকরণীয় সাইফ সোহেল। আর ২০১২ সালের সেরা ডিজাইনারের পুরস্কার তার কাজের স্বীকৃতি।
তিনি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, নাটক এবং চলচিত্রের জন্য পোশাক তৈরি করে এরই মধ্যে সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছেন।
এতো কম সময়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে ঈর্ষণীয় সাফল্যের পেছনে পেশার প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা, সততা এবং বাবা মায়ের সাপোর্টই কাজ করেছে বলে মনে করেন সাইফ।
জীবন চলার পথে যোগ্য সঙ্গী, স্ত্রী খাদিজা জুহির অবদানও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রিয় খাবার: শুধুমাত্র ক্ষুধার জন্যই খেতে হয়, এমনিতে খাবারের প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ নেই সাইফের। বাড়িতে রান্না করা মাছ, বিভিন্ন ভর্তা, গরুর মাংস ভুনা আর খিচুরী খেতে পছন্দ করেন। কোনো রিচফুড পছন্দ নয়।
প্রিয় ব্যক্তিত্ব: দেশি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে সাইফের আইডল বিবি রাসেল। সাইফ বলেন, তিনি(বিবি রাসেল) দেশ নিয়ে যেভাবে ভাবেন এটা অন্যদের মধ্যে নেই বললেই চলে। বিবি রাসেল আমাদের দেশি পোশাককে বিশ্ব দরবার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। এবার বাকী কাজ করতে হবে আমাদের।
স্বপ্ন: সাইফ স্বপ্ন দেখেন একদিন বাংলাদেশের ডিজাইন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। প্যারিস, মিলান, বার্লিন, টোকিও ফ্যাশনের মতো বাংলাদেশি ফ্যাশনও সবাই এক নামে চিনবে। আর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সবাইকে এক কাতারে কাজ করতে হবে।
আপনার চারপাশের সফলদের কথাও আমাদের জানান...
lifestyle.bn24@gmail.com