সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভাসিটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা শেষ করেন কাজী কামরুল ইসলাম। কিন্তু পড়াশুনার ট্র্যাকে না গিয়ে তিনি এখন দেশের একজন স্বনামখ্যাত বিউটি এক্সপার্ট।
কিছুক্ষণের জন্য আড্ডায় মেতে উঠলেন। অনেক দিনের জমে থাকা কথাগুলো অনায়াসে বলে গেলেন। বলে ফেললেন কীভাবে তিনি গড়ে তুলেছেন বানথাই, তার বিউটি এক্সপার্ট হওয়ার গল্প, ভবিষ্যতে তার কী পরিকল্পনা আছে এসব বিষয়। মাঝে জানতে পারলাম তিনি যে চেয়ারে বসে আমাদের সঙ্গে আড্ডায় মজেছেন সেটা বানথাই স্যালনের সব থেকে পুরোনো চেয়ার, এই একটি চেয়ার থেকে বানথাই আজ একটি প্রতিষ্ঠান। সেই ১৩ বছরের পুরোনো চেয়ারটিতে বসে বর্তমান আর অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে যে কথাগুলো বলছিলেন তার আলোকেই আজকের এই ফিচার।
১৯৯৯ সালে বানথাই যাত্রা শুরু করে গুলশান-১ এ। একটি শপ আর সেই শপের সঙ্গে কিছু বিউটি প্রসাধনী নিয়ে গড়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটি। তখন বোঝা যায়নি প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে এতো বড় হবে। বানথাইয়ের কর্ণধার কাজী কামরুল ইসলামের প্রতিদিনে রুটিন ছিল দোকানের সময় মতো আসা। আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠানটি বড় হতে থাকে আর সেই সঙ্গে কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী শপ চলতে থাকায় পরিচিতিটা বেড়ে যায়।
বিউটি প্রসাধনীর কাস্টমারও আস্তে আস্তে বাড়ার কারণে এক সময় শপের পাশাপাশি দিয়ে ফেলেন বিউটি স্যালন। সেখানেও প্রসারণ। ভালো মানের ট্রিটমেন্টর ফলে কাস্টমারদের আসা-যাওয়া বেড়ে যায়। এরপর বড় পরিসরে বানথাই যাত্রা শুরু করেন। এমনটাই জানালেন কাজী কামরুল ইসলাম।
বর্তমানে বানথাই আরো প্রসার করতে তিনি নানান দেশ থেকে ট্রেনিং নিচ্ছেন। সেই আদলে ২/৩ মাস পরপরই তিনি ট্রেনিং নিতে দেশের বাহিরে যান। ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, হংকং থেকে তিনি এই বিষয়ে নানা ধরনের ডিগ্রি নিয়েছেন।
এর পাশাপাশি নতুন খবর আছে আরো একটি। দেশের জন্য খবরটি গৌরবেরও বটে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বিউটি সেগমেন্ট নিয়ে কাজ করা এক্সপার্টদের জন্য ফিলিপিনে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি। ম্যানিলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এই বিউটিফিকেশন আসরে মুলত হেয়ার কাটিং, হেয়ার সেটআপ আর মেকআপ নিয়ে প্রতিযোগিতায় লড়বে বিউটি এক্সপার্টরা।
১০ জন এশীয়দের মধ্যে সেরা চ্যাম্পিয়ন থেকে বেছে নেয়া হবে একজন চ্যাম্পিয়ন অব দি ইয়ার। আন্তর্জাতিক কসমেটোলজি ২০১৩‘র এই আসরে বাঙালি বিউটিশিয়ান হিসেবে বিচারকের দায়িত্ব এবারই তিনি প্রথম পালন করার সুযোগ পেলেন। এ প্রসঙ্গে বিউটি এন্ড হেয়ার এক্সপার্ট কাজী কামরুল ইসলাম জানান, আমাদের দেশের বিউটি এক্সপার্টদের নিজেদের আরো এক্সপার্ট করতে নিয়মিত দেশের বাইরে ট্রেনিং এ যাওয়া উচিত। মেকওভার বিষয়ে আরো আপডেট তাহলে আমরা গ্রাহকে রাখতে পারবো। তবে, আমাদের দেশের মডেলদের ভিসা জটিলতা কমিয়ে আনা গেলে আমরাও তাদেরসহ আন্তর্জাতিক বিউটি-মেকওভার কনটেস্টগুলোতে দেশীয় অংশগ্রহণকারীদের উদ্বুদ্ধ করতে পারবো। আর আমি একা না দেশের আরো বিউটি এক্সপার্ট এগিয়ে এলে এই ইন্ডাস্ট্রি দেশের বাইরেও প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। উল্লেখ্য, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর হেয়ার এন্ড মেকআপের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনেলে অনুষ্ঠিত হবে। আর এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবে ফিলিপাইন ইন্টারন্যাশনাল কসমোটোলজিস্ট এসোসিয়াশন্স।
অনেক তো কাজের কথা হলো, এবার জানতে চাইলাম এতো সাহস তিনি কোথায় পেলেন যে সময়ে তিনি এই বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন, তখন তো অনেক সফল নারীও এই পেশায় আসতে সাহস করেননি। স্বভাব সুলভ হেসেই উত্তরে জানালেন, সেদিন যদি না এগিয়ে আসতাম তবে আজ হয়তো এতোগুলো মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব ছিলো না।
তিনি বিশ্বাস করেন শেখার কোনো শেষ নেই। আর তাইতো প্রতি দুই মাস পর পর তিনি ছুটে যান, হেয়ার স্টাইলের নতুন ট্রেন্ড শিখে নিতে। তিনি কখনোই সেই কাজটা করতে চান না যা তিনি পুরোপুরি জানেন না। বিশ্বের ফ্যাশন জগতের নতুন সব সংযোজনের সঙ্গে তার মিলিয়ে নিজেকে আপডেট রাখতে চান কামরুল।
দারুণ ব্যস্ত কামরুলের অবসর নেই বললেই চলে। তার পরও যেটুকু সময় পান বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেই বেশি পছন্দ করেন।
শুধু মানুষই তার বন্ধু নয়, প্রকৃতির আরও কিছু জীব রয়েছে যারা কামরুলকে বন্ধু মনে করে। তাইতো বাড়ি ঢুকলেই সেই বন্ধুদের কাছেই ছুটে যান তিনি। ছোট্ট একটি চিড়িয়াখানার মালিকই বলতে হয় তাকে। কী নেই তার এখানে নানা রং-এর পাখী থেকে কুকুর বিড়াল...
কথায় কথায় কখন যে সময় চলে যায়, তবুও কথা ফুরায় না।
বাংলানিউজের বন্ধুদের চুলের যে কোনো সমস্যার সমাধান দেবেন হেয়ার এক্সপার্ট কাজী কামরুল ইসলাম। আপনার সমস্যা জানাতে পারেন... lifestyle.bn24@gmail.com এই মেইলে।