ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লন্ডন

বাংলানিউজকে রওশন এরশাদ

স্থিতিশীল রাজনীতি রয়েছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে

সৈয়দ আনাস পাশা, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
স্থিতিশীল রাজনীতি রয়েছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লন্ডন: বর্তমানে রাজনীতিতে অস্থিরতা নেই, স্থিতিশীল রাজনীতি রয়েছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। আর জাতীয় স্বার্থেই অস্থিরতাবিহীন রাজনীতি এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ।



রোববার (২৫ অক্টোবর) লন্ডনে জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম উদ্দিনের রেডব্রিজের বাসভবনে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

উন্নয়নের কৃতিত্ব বিরোধী দলেরও
বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, বিগত বছরগুলোতে অস্থির রাজনীতি মোকাবেলায় সরকারের অধিকাংশ সময় ব্যয় হতো বলেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টি সংসদীয় রাজনীতির সুস্থ চর্চার যে নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে, এ কারণেই সরকার উন্নয়নের দিকে মনযোগ দিতে পারছে এবং উন্নয়ন হচ্ছে।

সুতরাং আমি মনে করি, দেশের সাম্প্রতিক এ উন্নয়নের কৃতিত্ব সরকারের একার নয়, বর্তমান বিরোধী দলেরও, যোগ করেন রওশন এরশাদ।

রওশন বলেন, জাতীয় পার্টির গঠনমূলক সুস্থ রাজনীতি চর্চার ধারণা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে বলেই সংসদকেন্দ্রিক রাজনৈতিক বিতর্কের প্রতি এখন সবার আগ্রহ। কে স্বাধীনতার ঘোষক, এমন সব বিতর্ক নিয়ে একসময় সংসদের অধিকাংশ সময় ব্যয় হতো, দিনের পর দিন বিরোধী দল থাকতো সংসদের বাইরে, সেই অবস্থা এখন আর নেই।

এখন বিতর্ক হয় সরকারের পলিসি নিয়ে, দেশের উন্নয়নের কৌশল নিয়ে, যা অনেকটা ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসির মতো বলে তার মত।

ব্রিটেনের মতো ছায়া মন্ত্রীসভা প্রয়োজন
রওশন বলেন, আমাদের দেশে পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে এই সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন।

পার্লামেন্টারি রাজনীতির চলমান সুস্থ চর্চা অব্যাহত থাকবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে রওশন এরশাদ বলেন, রাজনীতি চর্চার এ সুস্থ ধারা রাখতে না পারলে ১/১১ এর মতো অপশক্তি আবারও বিঘ্নিত করতে পারে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা।

সরকার ও বিরোধী দলের দ্বৈত ভূমিকায় অসুবিধা নেই
জাতীয় পার্টি বিরোধী দল আবার সরকারেও, দ্বৈত এই ভূমিকা পালনে সমস্যা হয় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, না আমাদের সমস্যা হয় না। কারণ, জনগণের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে এমন সামান্যতম সম্ভাবনা যুক্ত সরকারি পলিসির বিরোধিতা করতে জাতীয় পার্টি পিছপা হয় না।

‘সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে আমাদের মন্ত্রীরা যেমন ভূমিকা রাখছেন, ঠিক তেমনি দেশ ও জনগণের স্বার্থের প্রশ্নে পার্লামেন্টে সরকারের কঠোর সমালোচনাও করছি আমরা। এক্ষেত্রে পার্লামেন্টারি নিয়ম-কানুন মেনে প্রয়োজনে পার্লামেন্ট থেকে যেমন ওয়াক আউট করছে জাতীয় পার্টি, ঠিক তেমনি জাতীয় স্বার্থে সরকারের সঙ্গে একমত পোষণও করছে। ’
 
জাপা মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবে
রওশন এরশাদ বলেন, আমরা জানি সরকারে থেকেও জাতীয় পার্টি কিভাবে বিরোধী দলীয় ভূমিকা পালন করছে, এনিয়ে কারও কারও মনে সন্দেহ রয়েছে। এ সন্দেহ দূর করার জন্যই আমাদের মন্ত্রীদের সরকার থেকে সরিয়ে নেওয়ার একটি চিন্তা আমাদের রয়েছে। সময় হলেই এটি কার্যকর হবে।

এরশাদের মন্তব্যের মানে খুঁজতে নেই
রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে দলের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের পরস্পরবিরোধী মন্তব্যের কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে, বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, পার্টিতে সবার কথা বলার একটি প্র্যাকটিস রয়েছে আমাদের। হয়তো জনগণের স্বার্থের প্রশ্নে সঠিক মনে করেই মাঝে মধ্যে তিনি মন্তব্য করে থাকেন। দলের কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে এটি হয়তো করতেই হয়।

এসময় তিনি হেসে হেসে বলেন, সব মন্তব্যের মানে না খুঁজলেই তো হয়।

বিএনপি’র দৃষ্টিভঙ্গির দৈন্যতা
বর্তমান সরকার ও বিরোধী দলের বৈধতা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, কোনো একক দল বা গোষ্ঠী নয়, সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটির সরকার ও বিরোধী দল সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করে এটিই বিবেচ্য বিষয়। বর্তমান সরকার ও বিরোধী দল জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বলেই দেশ আজ স্থিতিশীল। ব্যবসা, কর্মক্ষেত্র, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গন আজ প্রাণোচ্ছ্বল।

বর্তমান সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি বিদেশিদের সমর্থন রয়েছে বলেই কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নসহ (আইপিইউ) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে।

জেনেভায় সদ্য সমাপ্ত আইপিইউ কনফারেন্সে নিজের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও সরকারি প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে আমার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করছেন তারা। এরপরও যদি বর্তমান পার্লামেন্ট ও সরকারের বৈধতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন, সেটি তার দৃষ্টিভঙ্গির দৈন্যতা, এক্ষেত্রে আমাদের কিছু বলার নেই।

পাঁচ বছর মেয়াদ পূরণের আশাবাদ
এই সরকার ও পার্লামেন্টের মেয়াদপূর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। একটি সরকার বা পার্লামেন্ট তার মেয়াদ পূরণ করবে, এটিই তো নিয়ম। আমাদের আশাবাদও এমনটি।

দুই বিদেশি হত্যা বিচ্ছিন্ন ঘটনা
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও দুইজন বিদেশি নাগরিক হত্যা সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে, ১৬ কোটি মানুষের দেশে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা বলে মন্তব্য করেন বিরোধী দলীয় নেত্রী।

তিনি বলেন, আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশেও বিচ্ছিন্ন এমন ঘটনা ঘটে। এ প্রসঙ্গে তিনি আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরির কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশেও তো লোডশেডিং হয়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের সুযোগে এমন চুরি ও রাহাজানি তো হয় না।

বিদেশি হত্যা, হোসনী দালানের পাশে বোমা হামলা ইত্যাদি ঘটনাগুলো দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ বিঘ্নিত করতে পরিকল্পিতভাবে কোনো গোষ্ঠী ঘটাচ্ছে কিনা, সরকার তদন্ত করে নিশ্চয়ই এটি বের করবে এমন আশাবাদ জানিয়ে, রওশন এরশাদ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর ওপর হামলার নিন্দা
গত বুধবার লন্ডনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সদ্য সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর উপর হামলার কথা উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক অপপ্রচারে যারা উৎসাহ বোধ করেন, ব্রিটেনের মতো একটি সুনিয়ন্ত্রিত সভ্য দেশে অন্য একটি দেশের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক একজন বিচারপতির উপর এ ধরনের হামলাকে তারা কিভাবে মূল্যায়ন করবে তারাই জানেন।

রওশন এরশাদ বিচারপতি চৌধুরীর উপর হামলার নিন্দা জানান ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।

দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন অবস্থান ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টার খবর সম্পর্কে তিনি বলেন, ভারত আমাদের অন্যতম একটি বড় শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ। দেশটির সঙ্গে পারস্পরিক সমমর্যাদার ভিত্তিতে সহাবস্থান আমাদের সবারই কাম্য। কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, এ দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় পার্টি পোষণ করে।

রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কেমন হবে, তা ঠিক করবে আমাদের জনগণই। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, আমার দলের সব শক্তির উৎস আমার দেশের জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতাও থাকবে দেশের জনগণের কাছে।

তত্ত্বাবধায়ক সিস্টেম রাজনীতিবিদদের জন্যে সম্মানজনক নয়
আগামী নির্বাচনেও যদি বিএনপি তার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির প্রতি অটল থাকে, তখন জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে, এ প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বহির্বিশ্বের কাছে রাজনীতিতে আমাদের পারস্পরিক আস্থাহীনতাই প্রমাণ করে। এটি দেশের জন্য সম্মানের নয়। আমি মনে করি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, সব দলের অংশগ্রহণে অন্তবর্তীকালীন সরকারই হতে পারে দেশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সম্মানজনক পন্থা।

আইএস এর অস্তিত্ব নেই দেশে
রওশন এরশাদ বলেন, জঙ্গিবাদ সারা বিশ্বেরই একটি সমস্যা। জঙ্গি হামলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জর্জরিত। এদিক থেকে বিচার করলে বাংলাদেশে তো এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিজেদের দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে কেউ যদি দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চান, তবে তার জবাব জনগণকে তারাই দেবেন। এ ধরনের ঘটনা নিশ্চয়ই সরকার কঠোর হাতে মোকাবেলা করবে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে সন্তুষ্টি
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার সব মান বজায় রেখেই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, দণ্ড কার্যকরও হচ্ছে।

জাতীয় পার্টি এ ইস্যুতে সরকারকে সমর্থন দেয় এমন মন্তব্য করে রওশন বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এ বিচার বিরাট ভূমিকা পালন করবে।

জেনেভায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) কনফারেন্সে যোগদান শেষে দেশে ফেরার পথে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ এখন লন্ডন অবস্থান করছেন। রোববার লন্ডনে জাতীয় পার্টির এক জনসভায় তার বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
এমজেড/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

লন্ডন এর সর্বশেষ