ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লন্ডন

একাদশ 'কারি অস্কার'

বাঙালি’র কারি ব্রিটিশ ঐক্যের সেতুবন্ধন

সৈয়দ আনাস পাশা, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৫
বাঙালি’র কারি ব্রিটিশ ঐক্যের সেতুবন্ধন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লন্ডন: ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের প্রধান ব্যবসা সেক্টর কারি ইন্ডাস্ট্রিকে ‘ওয়ান নেশন’ ঐক্যের সেতুবন্ধন হিসেবে অভিষিক্ত করলেন ব্রিটিশ সেলিব্রেটিরা। তাদের মতে এই সেক্টরটি এখন ব্রিটিশদের হাউজহোল্ড ব্রান্ড।

‘ওয়ান নেশন’ চেতনায় প্রায় প্রতিদিনই শান দিচ্ছে বাঙালির কারির টেবিল, যা অপশক্তি মোকাবেলায় সাহস যোগাচ্ছে ব্রিটিশদের।

মূলধারার ব্রিটিশ সেলিব্রেটিদের এমনই মন্তব্য ছিলো সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় লন্ডনের ‘বাটারসি এভোলিউশন’ এ কারি অস্কার খ্যাত একাদশ ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে।

বিবিসি’র জনপ্রিয় নিউজ প্রেজেন্টার জেইন হিলের উপস্থাপনায় জমকালো এই অনুষ্ঠানটিতে ব্রিটিশ সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, মূলধারার মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত দেশ-বিদেশের প্রায় ১৮শ‘ বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। উৎসবটি কাভার করতে উপস্থিত ছিলো বিবিসি, স্কাই, আইটিভি, আইটিএন, এনডিটিভি ও জিওসহ মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলো।

অনুষ্ঠানে সারা দেশের অঞ্চল ভিত্তিক সেরা রেস্টুরেন্টগুলোর হাতে এওয়ার্ড তুলে দেন খ্যাতিমান ব্রিটিশ সেলিব্রেটিরা। নাচ-গানে ভরপুর অনুষ্ঠানে বক্তাদের মুখে বার বার উঠে আসে একটি পরিশ্রমী জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল আজকের সমৃদ্ধ কারি ইন্ডাস্ট্রির কথা।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন অনুষ্ঠানে প্রেরিত তাঁর বাণীতে বলেন, ২শ’ বছর আগে ওয়েস্ট মিনিস্টারে হিন্দুস্থান কফি হাউসের মাধ্যমে যে ইন্ডাস্ট্রির গোড়াপত্তন, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সেটি আজ ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যতম মহীরুহ। যাদের মেধা ও শ্রমের বিনিময়ে পূর্ব প্রজন্মের প্রতিষ্ঠিত এই সেক্টর আজকের পর্যায়ে এসেছে তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

তিনি বলেন, প্রতিদিন, প্রতিরাত উন্নত খাবার, উন্নত পরিবেশনা দিয়ে কাস্টমারদের উন্নত সেবা দিচ্ছেন যারা তারা সত্যিই ‘সেরা ব্রিটিশ’। কারি ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাস বর্ণনা করে নিজ বাণীতে ক্যামেরন আরও বলেন আজ থেকে প্রায় ২শ’ বছর আগে ভারতীয় নাগরিক দীন মোহাম্মদ ইন্ডিয়ান খাবারের সাথে ব্রিটিশদের যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, সেই পরিচয় এই জাতীর খাদ্যাভ্যাসই বদলে দিয়েছে। কারিবিহীন একটি সপ্তাহ আজ কল্পনাও করে না কোন ব্রিটিশ নাগরিক।

সেক্রেটারি অব স্টেট ফর এডুকেশন (শিক্ষা মন্ত্রী) নিকি মরগান বলেন, পঞ্চাশ বছর আগে কারি শিল্পের সাথে জড়িত প্রথম প্রজন্ম তাদের পারিবারিক কারি রেসিপি নিয়ে এসেছিলেন ব্রিটেনে। স্বাভাবিক কারণেই তখন রেস্টুরেন্ট পরিচালনার মত তাদের কোন অভিজ্ঞতা ছিলো না। কারির প্রতি তাদের আবেগই ট্রাডিশনাল পদ্ধতিতে ব্রিটিশ টেস্টের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন রেসিপি তৈরিতে তাদের উৎসাহিত করে। সাম্প্রতিক সময়ে বাঙালির কারি ইন্ডাস্ট্রির সমৃদ্ধতার উদাহরণ দিতে গিয়ে নিকি মরগান বলেন, আজ কারি একটি স্বীকৃত ব্রিটিশ হাউজহোল্ড ব্রান্ড। শুধু ব্রিটেনেই নয়, এই কারি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে, আমাদের অর্থনীতিতে যোগান দিচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড। এই অর্জন অবশ্যই আমাদের জন্যে গর্বের। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা এ দেশকে অনেক দিয়েছেন, আপনাদের এই ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত স্বপ্ন সম্ভাবনায় সরকার আপনাদের পাশে থাকতে চায়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী এমবিই। ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যতম যোগান দাতা কারি ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন তিনি তাঁর বক্তব্যে।

উল্লেখ্য, প্র্রতি বছর ব্রিটিশ অর্থনীতিতে ৩.৬ বিলিয়ন পাউন্ড যোগানদাতা কারি ইন্ডাস্ট্রির স্বপ্ন-সম্ভাবনা সামনে রেখে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এনাম আলী এমবিই ২০০৫ সালে এই ইভেন্টটি চালু করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

লন্ডন এর সর্বশেষ