ঢাকা: সবার হাতে ফুল। অনেকের কাছে আছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা কালো ব্যানার।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের স্মরণ করতে আসা সাধারণ মানুষ এবার স্বপ্ন দেখছেন একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। তারা বলছেন, এবার আর আক্ষেপ নয়, পেছনে তাকানো নয়, এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
স্বজন হারানোর বেদনায় আচ্ছন্ন মন আর বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের রায় কার্যকরের স্বস্তি এবার তৈরি করেছে এক ভিন্ন আবহ। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জানিয়ে সচেতন নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান ছিল তাদের সন্তানদের।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে এসে শহীদ পরিবারের সন্তানরা বলেন, দেশের প্রতি ত্যাগের মাধ্যমেই বড় হওয়া যায়, এটাই তারা শিখিয়েছেন।
বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রায়ের বাজারের বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে সকালে মানুষের ঢল নামে। এসময় তারা বলেন, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানিরা পরাজয় বুঝতে পেরে জাতিকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে। পাকিস্তানি সেনাদের এদেশীয় দালালরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার প্রথিতযশা ব্যক্তিদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। বিজয়ের স্বাদ গ্রহণের আগে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে নিয়ে তাদের গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছোট ছেলে আসিফ মুনীর বলেন, দেশের মুক্তির জন্য রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন, বিভিন্ন এলাকাকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে সেক্টর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান, বাংলাদেশের প্রথম সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যারা এদেশ এনে দিয়েছে, তাদের সম্পর্কে না জানলে কী করে নতুন প্রজন্ম জাতির হাল ধরবে! তাদের এ বিষয়ে আরও বেশি করে জানাতে হবে।
শহীদ শিহাব উদ্দিন শেখের সন্তান শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত অনেকের বিচারের রায় কার্যকরের ফলে স্বস্তি বোধ করছি। তবে এখনো পলাতক রয়েছে অনেকে। তাদের অস্তিত্ত্বকেও লালন-পালন করছে অনেকে। তাদের সঠিক বিচার এবং রুখে দেওয়ায় আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুই দিন আগে বুদ্ধিজীবী হত্যায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজারে।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনতার ঢল নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনতার স্রোত।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
এইচএমএস/এসএ