বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যেখানে তথ্য সংগ্রহকারীদের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি না যাওয়া, নিয়ম না মেনে নির্দিষ্ট স্থানে ও ব্যক্তি বিশেষের বাসায় বসে নতুন ভোটারের তথ্য হালনাগাদ করার অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ কে এম মুরতজা আবেদীন নির্বাচন কমিশনে বার বার লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা পাননি বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কাউন্সিলর এ কে এম মুরতজা আবেদীন বলেন, অন্য ওয়ার্ডে বসবাসকারীদেরও ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তি করাসহ আমার ওয়ার্ডে ভোটার তালিকা হালনাগাদের ক্ষেত্রে নানান অনিয়ম হয়েছে। আর এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো তদন্ত কর্মকর্তা এ পর্যন্ত আমাকে জিজ্ঞাসাবদই করেনি। আদৌ তদন্ত হচ্ছে তাও বলতে পারছি না।
বাধ্য হয়ে সবশেষ ৭ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই কাউন্সিলর তার অভিযোগে বলেন, ১৯৯৫ সাল থেকে ২ নম্বর ওয়ার্ডের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবা দিয়ে আসছি। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে উল্লেখ আছে যে, ২০/০৫/২০২২ থেকে ০৯/০৬/২০২২ তারিখ পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। নতুন ভোটার হতে হলে অনলাইন জন্মসনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি, বাড়ি ভাড়ার রশিদ, কাউন্সিলর কতৃক নাগরিক সনদ পত্র, পিতা/ মাতা বা স্বামী/স্ত্রীর আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন। কিন্তু এই ওয়ার্ডের নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে এই সব কাগজপত্র যথাযথভাবে সংগ্রহ করা হয়নি। তথ্য সংগ্রহকারীদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ নিজ বাসা ও নির্দিষ্ট স্থানে বসে একাধিক নতুন ভোটার হালনাগাদ করেছেন মর্মে যথাযথ তথ্য প্রমাণও তার কাছে রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
লিখিত অভিযোগ তিনি আরও বলেন, তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে মর্মে একাধিক অভিভাবকের কাছ থেকে প্রত্যয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। তথ্য সংগ্রহকারীরা তাদের ত্রুটি ঢাকার জন্য এই প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
জাতীয় পার্টির এই ভাইস চেয়ারম্যান তার লিখিত অভিযোগ আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনে একাধিকবার দেওয়া অভিযোগ সম্পর্কে কোনো তদন্ত কর্মকর্তা অদ্যবধি যোগাযোগ করেনি। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটারদের যাচাইকারী হিসেবে ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর/সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীরাই দায়িত্ব পালন করবেন। অথচ আমি নিজেও প্রতিদ্বন্দী কাউন্সিলর প্রার্থী এলাকায় থাকা সত্বেও যাচাইকারী হিসেবে সংরক্ষিত কাউন্সিলরের সচিব ও অফিস সহায়ককে দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো হয়েছে। যাচাইকারী ওয়ার্ড সচিবকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে এই ওয়ার্ডের হালনাগাদ নতুন ভোটারদের কাউকে চেনেন না বলে স্বীকার করেছেন।
অন্য ওয়ার্ডে বসবাসরতদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার করা হয়েছে। দিব্য দাস, উম্মে তালহা সুবহা, রাব্বি সরদারসহ অনেককেই ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার করা হয়েছে নানা ঠিকানা দেখিয়ে। অথচ যে সব ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে সেই এলাকার মানুষই তাদের চেনে না।
অপরদিকে সমস্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাদ পড়া নতুন ভোটারদের স্থানীয় জিলা স্কুলে নতুন ভোটার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলেও সেখানে যাচাইকারী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ এই কাউন্সিলরের।
২ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিল বলেন, এবারে আমার ওয়ার্ডে যে নতুন ভোটার করা হয়েছে। এদের মধ্যে কারো অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন নেই আবার কেউ এই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা নয়। আমি সব মিলিয়ে নতুন ৩ থেকে ৫ জন নতুন ভোটারকে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছিলাম। বাকিগুলো কিভাবে তারা হয়েছে বা তাদের কিভাবে যাচাই করেছে তথ্য সংগ্রহকারীরা তা জানি না। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সচিব তো যাচাই করতে পারে না। সে ও অফিস সহায়ক কিভাবে যাচাইকারী হয় বুঝি না।
যদিও ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সচিব মো. রাব্বি জানিয়েছেন, নিয়মানুযায়ী তিনি নতুন ভোটার যাচাইকারী হতে পারেন, বিগত দিনেও
তিনি এ কাজে যুক্ত ছিলেন। আর ২ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সাধারণ কাউন্সিলরকে জানানো হলেও তিনি আসেননি বলে জানিয়েছেন এই সচিব।
এদিকে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহকারী মানিক মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল বাসারের দাবি, তারা কারো অফিসে বসে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেননি, নতুন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সব কিছু যাচাই বাছাই করে কাজটি সম্পন্ন করেছেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহেব সন্দেহবশত এসব অভিযোগ করছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তারাও বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন।
তথ্য সংগ্রহকারী কাশিপুর গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ সিনিয়র সহকারী শিক্ষক শায়লা পারভীন জানান, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নন তারা, আর তার বাসায় বসে তথ্য সংগ্রহের কোনো কাজ করাও হয়নি। যেটা লিগ্যাল সেটাই করা হয়েছে।
২ নম্বর ওয়ার্ডে তথ্য সংগ্রহকারীদের সুপারভাইজার শহিদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রদর্শক আনোয়ার হোসেন খান সাংবাদিকদের জানান, তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ কাউন্সিলের সঙ্গে কথা হয়েছে, ডোর টু ডোর গিয়ে সব কিছু যাচাই বাছাই করা হয়েছে। এ ওয়ার্ডে এবার হাজারের মতো নিবন্ধিত করা হয়েছে, যার মধ্যে সামনের সিটি নির্বাচনে দুই থেকে আড়াইশত বা ততোধিক ব্যক্তি ভোট দিতে পারবেন।
সার্বিক বিষয়ে বরিশাল সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, অভিযোগের পর বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া ১৫ জানুয়ারি ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। সে সময় ওই কাউন্সিলরের যদি কেনো অভিযোগ থাকে তাহলে সে নির্বাচন কমিশনকে আবেদন করতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
এসএম/এসএ