ঢাকা: আওয়ামী লীগ এ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, সুরক্ষা দেয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না, সুরক্ষা দেয়। আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু জানে বেঁচে থাকাটাই তো মানবাধিকার না। আজকে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি, খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি, বিএনপি কত মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করেছে? এক কোটি ৬৯ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য ছিলো। আমরা আজকে চার কোটি ৭২ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করছি। আমরা চালই তো উৎপাদন করছি চার কোটি চার লক্ষ মেট্রিক টন। গম, ভুট্টা সব আমরা উৎপাদন করছি। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষকে আমরা বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি, স্বল্প মূল্যে দিচ্ছি। করানোর সময় বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। আমরা বিনা পয়সায় ওষুধ দিচ্ছি, সমগ্র বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। ’
দেশে গুমের কালচার শুরু করেছিল জিয়া
দেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান গুমের সংস্কৃতি শুরু করেছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এদেশে গুমের কালচার তো শুরু করেছে জিয়াউর রহমান এবং তখন যারা কারাগারে ছিলো তাদের কাছে আপনারা অনেকবারই শুনেছেন, একেক রাতে জিয়াউর রহমান শত শত সেনাবাহিনীর অফিসার, সৈনিক, বিমান বাহিনীর অফিসার, সৈনিকদের হত্যা করেছে। সেইসঙ্গে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, গুম করেছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু তাই না, এই ফাঁসি দেওয়া, একই দিনে একইসঙ্গে দশ জন করে ফাঁসি, সেই ফাঁসি দেওয়ার পর সেই লাশ? কই, তাদের আত্মীয়-স্বজন তো পায়নি! তাদের কাছে তো পাঠানো হয়নি। সেই লাশ নিয়ে মাটি চাপা দিয়ে কোথায় লুকিয়েছে, কেউ আজ পর্যন্ত বলতে পারে না। এখনো আত্মীয়-স্বজন খুঁজে বেড়ায়। কোথায় তাদের লাশ। ’
তিনি বলেন, ‘যারা খুন হয়েছে, তাদের পরিবারগুলো এখনো তাদের স্বজনদের লাশ পায়নি। তারা আজও আপনজনের জন্য কেঁদে ফেরে। বিএনপি কোন মুখে গুম-খুনের কথা বলে প্রশ্ন তোলে। জিয়াউর রহমান যা করেছে, খালেদা জিয়া একই কাজ করেছে। ’
খুনিদের মানবাধিকার রক্ষায় তারা ব্যস্ত
এসময় পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফেরত না দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনিদের মানবাধিকার রক্ষা করতে তারা ব্যস্ত। তাহলে আমাদের অপরাধটা কি? যারা স্বজন হারিয়েছি, আপনজন হারিয়েছি!’
তিনি বলেন, ‘খুনি হুদার তো ফাঁসি হয়েছে, রাশেদ পাকিস্তানে পলাতক। ডালিম আর রাশেদ এখনো পাকিস্তানে পলাতক। রাশেদ, যে আমার সেজো ফুফুর বাড়িতে গিয়ে ওই চার বছরের সুকান্ত থেকে শুরু করে আমার ফুফুকে গুলি করেছে, ফুফাকে হত্যা করেছে, আমার তিন তিনজন ফুফাতো বোনকে হত্যা করেছে, ভাইকে হত্যা করেছে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে এখন আমেরিকায়। বারবার তাদের কাছে আমরা অনুরোধ করছি যে, ওই আসামিকে আপনারা ফেরত দেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে দেয় না। কারণ খুনির মানবাধিকার রক্ষা করছে তারা। অর্থাৎ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকেই রক্ষা করছে। আর মেজর নূর, যে সরাসরি ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়েছিল। সেই নূর এখন কানাডায়। কানাডা সরকারকে বারবার অনুরোধ করি, তাদের আর ফেরত দেয় না। ’
তিনি বলেন, ‘সেটা আমি জাতির কাছে জিজ্ঞাসা করি যে, বিএনপি বা এই যে জামাত, এদের জন্য যারা হাপিত্যেশ করে, কান্নাকাটি করে। তারা জবাব দিক। ’
সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
এমইউএম/এনএস