শরীয়তপুর: জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নে আলহাজ্ব কাজী দিদার বক্স ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদ নির্মাণ কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কমিটির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন মাদরাসার সভাপতি।
অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে একটি মাদরাসার পানি ট্যাংকি বিক্রি। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কমিটিকে না জানিয়ে শিক্ষকরা একটি পানির ট্যাংকি বিক্রি করে দিয়েছেন। মাদরাসার সুপারও একই তথ্য দেন। কিন্তু তার দাবি, এতে নির্মাণ কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে আলহাজ্ব কাজী দিদারবক্স ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ওয়ামী নামে একটি সংস্থা মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নামাজ পড়ার সুবিধায় একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ নির্মাণ কাজের দায়িত্ব নেয়।
নির্মাণ কাজের শুরুতেই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও ও সভাপতি কাজী রাশেদুর রহমান (নান্নু) নিম্ন মানের মালামাল ব্যবহার করতে বারণ করেন। তিনি নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ও মাদরাসা সুপারের কাছে কাজের নকশা ও শিডিউলও চেয়েছিলেন। কিন্তু কারও কাছ থেকে তিনি কোনো তথ্য পাননি। তা ছাড়া মসজিদ নির্মাণ কাজের বরাদ্দ সম্পর্কে তিনি ও কমিটি কিছু জানে না।
পরে কাজী রাশেদুর রহমান মসজিদের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ তোলেন। তার দাবি, মাদরাসা সুপারের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষ করে চলে গেছেন। তার ধারণা মসজিদ নির্মাণ করতে ওয়ামী ২৫-৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু সে মানের কাজ হয়নি। এ ছাড়া মাদরাসা সুপার আমিমুল এহসান (সেকান্দর) প্রতিষ্ঠানের ৫০০ লিটারের একটি পানির ট্যাংকি কমিটিকে না জানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে কৈফিয়ত চাইলে মাদরাসা সুপার একটি লিখিত পত্রে বিষটি স্বীকার করে সভাপতি কাজী রাশেদুর রহমানের কাছে দেন। পরে বিষয়টি লিখিত অভিযোগ আকারে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কাছে পাঠান তিনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুনকে তদন্ত ও প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
নির্দেশনা পেয়ে ইউএনও গত শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সরেজমিনে এসে ঘটনার তদন্ত ও উভয় পক্ষের সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেন।
আলহাজ্ব কাজী দিদার বক্স ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কাজী রাশেদুর রহমান (নান্নু) বলেন, মসজিদ নির্মাণ কাজের বরাদ্দ আমাকে আজও জানতে দেওয়া হয়নি। কোনো নকশা বা শিডিউলও আমাকে দেয়নি। মসজিদ নির্মাণ কাজে অনিয়ম হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী নিম্নমানের ছিল। আমি খারাপ মালামাল দিয়ে কাজ করতে বারণ করলেও তারা শোনেনি। আমাদের মাদরাসার পানির ট্যাংকি কমিটিকে না জানিয়ে সুপার বিক্রি করেছে। আমি এসব ঘটনায় সঠিক বিচার দাবি করি।
বিষয়গুলো নিয়ে মাদরাসা সুপার মাওলানা আমিমুল এহসান (সেকান্দর) বলেন, মসজিদ নির্মাণের জন্য আমি চেষ্টা করে বরাদ্দ নিয়েছি। কিন্তু কত বরাদ্দ হয়েছে, আমি জানি না। নিম্ন মানের কোনো মালামাল দিয়ে কাজ হয়নি। পানির ট্যাংকিও আমি বিক্রি করিনি, ঢাকায় ছিলাম। শিক্ষকরা ট্যাংকিটি বিক্রি করে দিয়েছেন। আমি পরে এক হাজার লিটারের পানির ট্যাংকি কিনে দিতে চেয়েছি। কিন্তু সভাপতি সাহেব মানেন না।
এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জের ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার কাছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড অভিযোগের তদন্তভার দিয়েছে। আমি সরেজমিন তদন্ত করছি। আর কদিন সময় লাগবে। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিব। কর্তৃপক্ষ বিষয়টির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২
এমজে