ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘আমি লিভার দেব, আপনারা খরচটা দিন’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
‘আমি লিভার দেব, আপনারা খরচটা দিন’ অসুস্থতা নিয়েও মায়ের সঙ্গে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে ফারহান সাদিক

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের সরকারপাড়া গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির পর আর পড়তে পারছে না ফারহান সাদিক বর্ষ৷ তার সহপাঠীরা এখন পঞ্চম শ্রেণিতে। সাদিকের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ তার অসুস্থতা।

আট বছর বয়সে হঠাৎ করে কমে যায় সাদিকের দুরন্তপনা। নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ও ঢাকায় চিকিৎসা করেও অনেকদিন ধরা পরেনি তার রোগ।  

পরে ভারতের হায়দরাবাদে গেলে সেখানের চিকিৎসকরা জানান, সাদিকের লিভার বিকল হয়ে পরেছে। সুস্থ করতে দ্রুত করতে হবে লিভার পরিবর্তন। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর ডাক্তাররা জানান, মায়ের লিভারের অংশ দিলে সুস্থ হয়ে উঠবে সাদিক।

সন্তানকে বাঁচাতে এক পায়ে রাজি সাদিকের মা বাবলী বেগম। কিন্তু সেই লিভার প্রতিস্থাপনের অর্থ আর নেই হাতে। এতো বছর ধরে ছেলের রোগ খুঁজে বের করতে দেশে ও ভারতের চিকিৎসায় নিঃস্ব পরিবারটি।

ফারহান সাদিকের বয়স এখন এগারো। দিন দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শিশুটি।  

টাকার অভাবে থমকে আছে সাদিকের চিকিৎসা খরচ। নিজের জমানো টাকা, বসতভিটা বিক্রি ও আত্মীয়দের সহযোগিতা নিয়েও হচ্ছে না চিকিৎসা বাবদ খরচ৷ এমনিতেই পরিবারটি দরিদ্র। সাদিকের বাবা দেলোয়ার হোসেন ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের সরকারপাড়া গ্রামের বাস কন্ডাকটর।  

তাই খরচ যোগাতে সবার সহযোগিতা চেয়েছে সাদিকের পরিবার৷ সন্তানকে বাঁচাতে সাদিকের মায়ের আকুতি, ‘আমি লিভার দেব, আপনারা খরচটা দিন। ’

সাদিকের মা বাবলী বেগম বলেন, ছেলেকে সুস্থ করার জন্য দেশের বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছি। ঢাকার পিজি হাসপাতালসহ অনেক হাসপাতালে নিয়ে গেছি৷ কোন রোগ ধরা পরেনি৷ পরে ভারতে নিয়ে যাওয়ার পর লিভারের সমস্যা ধরা পরে৷ সাদিকের বাবা ও আমি দুজনে আমরা লিভার দেওয়ার কথা বলি। আমারটা তাকে দেওয়ার উপযোগী মনে করেন চিকিৎসক। ওনারা বলেছেন জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে করাতে লাগবে। এতে চিকিৎসা খরচ ব্যয়বহুল৷ আমরা টাকা জোগানোর চেষ্টা করছি। আত্মীয় স্বজনদের বলছি তবুও হচ্ছে না। যদি আপনারা সকলে আমাদের সহযোগিতা করে পাশে থাকেন৷ তবে আমি আমার সন্তানকে বাঁচাতে পারব৷ আপনারা সকলে আমার সন্তানকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন৷ 

সাদিকের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার পর তারা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি নেবেন। সব মিলিয়ে ৩০ লাখ টাকার মতো অপারেশনে খরচ লাগবে। আমার আয়ের উৎস তেমন নেই৷ কাজে গেলে টাকা আসে নাহলে আসে না। তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, সব আত্মীয় স্বজনদের কাছে সাহায্য চাচ্ছি৷ আমাদের পক্ষে এত টাকা জোগাড় সম্ভব না। আপনারা এগিয়ে না আসলে সাহায্য না করলে আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারব না। নিজের ছেলে ভেবে সকলে এগিয়ে আসুন৷ 

স্থানীয় প্রতিবেশী মহসিনা বেগম বলেন, ছোট থেকে সাদিক বেশ নম্র ও ভদ্র। কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে না৷ তিন বছর থেকে তার চিকিৎসা করাতে তার বাবা-মায়ের অনেক খরচ হয়েছে। এখন তার অপারেশনর জন্য অনেক টাকার দরকার। সকলে এগিয়ে আসলে তাকে সুস্থ করা সম্ভব।  

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, সাদিক বেশ মেধাবী৷ তাকে সুস্থ করতে পারলে ভবিষ্যতে সে ভালো কিছু করতে পারবে। আমরা সকলে সাধ্যমতো তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি৷ দেশবাসী এগিয়ে আসলে সে আবার আগের মত সুস্থ হয়ে ফিরবে ইনশাআল্লাহ।  

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আসলে বেদনাদায়ক। আর চিকিৎসার খরচ অনেক। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব পাশে থেকে সহযোগিতা করা হবে।  

সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা নিয়ে শিশু সাদিক বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পরি। তারপর থেকে আর পড়াশোনা করতে পড়াশোনা করতে পারিনি৷ সহপাঠীরা এবারে পঞ্চম শ্রেণিতে। আমি বড় হয়ে জাতীয় দলের খেলোয়াড় হতে চাই৷ সবাই আমাকে সুস্থ করতে সহযোগিতা করবেন৷ 

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।