ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

টাঙ্গাইলে পৌরসভার ড্রেন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী

  সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২
টাঙ্গাইলে পৌরসভার ড্রেন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে নিম্নমানের খোয়া ও নতুনের সঙ্গে পুরাতন রড মিলিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে তিন হাজার ৪২ মিটার ড্রেন। এতে চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন টাঙ্গাইল পৌরবাসী।

 

এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বলছেন ড্রেনের নিচের যে অংশে খোয়া দিয়ে ঢালাই করা হচ্ছে সেটি আসলে সিডিউলে ধরা নেই। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন সিডিউলে সম্পূর্ণ ঢালাই পাথর এবং নতুন রড দিয়েই করার কথা উল্লেখ্য রয়েছে।

জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ২০২১-২২/আর অ্যান্ড ডি-৩১ এর এক কিলোমিটার ৮১১ মিটার রাস্তা, দুই পাশে তিন হাজার ৮২ মিটার ড্রেন নির্মাণ ও ১৫১৫ মিটার স্ট্রিট লাইট স্থাপনের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স দাস ট্রেডার্স। যার চুক্তিমূল্য ১৪ কোটি ১৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা। এ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৩ সালের ২৯ জুন।

রাস্তার দুই পাশে নির্মাণ করা ড্রেনের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ড্রেনের একেবারে নিচের অংশে ঢালাই করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরাতন ডেনের ইটের খোয়া এবং রড। স্থানীয়রা বলছেন পুরাতন ইট থেকে যে খোয়া করা হয়েছে সেগুলো একেবারেই নিম্নমানের।  

এছাড়া পুরাতন ড্রেন থেকে যে রড বের করা হয়েছে সেগুলো আবার নতুন রডের সঙ্গে মিলিয়ে ঢালাই করা হচ্ছে। যেভাবে এই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে কতদিন টিকবে ড্রেনগুলো তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন পৌরবাসী।

ড্রেনের কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক জানান, নিচে যে ৫০ মিলি ঢালাই করা হচ্ছে তাতে পুরাতন ইটের খোয়া ও মাঝে মাঝে পুরাতন রড ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের ঠিকাদার যেভাবে কাজ করতে বলেছেন তারা সেভাবেই কাজ করছেন। তবে ঢালাই করা খোয়া একেবারেই নিম্নমানের বলে তিনি স্বীকার করেন।

সরেজমিন দেখা যায়, শহরের জেলা সদর রোডে পুরাতন রাস্তার মাঝখানে রাখা হয়েছে পুরাতন ইটের খোয়া। সেখানেই বালু আর সিমেন্ট মিশিয়ে ড্রেনের নিচের অংশে ৫০ মিলি ঢালাই করা হচ্ছে। এরপর ড্রেনের দুই পাশের এবং উপরের স্লাবে ব্যবহার করা হচ্ছে নতুন রডের সঙ্গে পুরাতন রড। এ নিয়ে কয়েকজন প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও পৌরসভার কয়েকজন কর্মকর্তার প্রভাবে দিন রাত তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মামুনুর রহমান জানান, নতুন করে যদি রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ করা হয় তাহলে সবকিছু নতুনই ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু তা না করে নিম্নমানের খোয়া ও পুরাতন রড ব্যবহার করা হচ্ছে এই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ড্রেনে। কয়েকদিন পর ড্রেনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায়ভার কে নেবে।

মোসলেম উদ্দিন নামে আরেক বাসিন্দা জানান, শুনেছেন এই রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণে যে টাকা ব্যয় হবে সেই টাকাও নাকি পৌরসভা ঋণ করেছে। এই টাকাতো তাহলে জনগণের ঘাড়েই পড়ল। তাহলে জনগণের সুবিধার জন্য যদি নতুন রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ করা হয় তাহলে ভাল করেই নির্মাণ করা দরকার। এভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ড্রেন বা রাস্তা করলে কয়েকদিন যেতে না যেতেই রাস্তা দিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে আর ড্রেনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে করে তার মতো সাধারণ বাসিন্দাদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী পাপন ভানু বলেন, মূলত কাজে আমার লাইসেন্সটি ব্যবহার করা হচ্ছে। তারপরও কিছুটা আমার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সিসি ঢালাইয়ে খোয়াগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ব্যবহার করার কথা। কিন্তু তা করা হচ্ছে কি না আমার জানা নেই। তবে বর্তমানে পৌরসভার তিনজন প্রকৌশলী বরখাস্ত হওয়ায় এই কাজে এখন কোনো তদারকি করার লোক নেই। যদি থাকতো তাহলে হয়তো কাজে কোনো অনিয়ম হতো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।