ঢাকা: কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে জমি নিয়ে বিরোধে ছোট ভাই সুলতানকে হত্যা করতে দাঁত ভাঙা পলাশের সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকা ও এক বিগা জমির বিনিময়ে চুক্তি করেন মমতাজ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি রাতে পলাশসহ ছয় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী মুখোশ পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ছোটভাই সুলতানসহ একই পরিবারের চারজনকে কুপিয়ে হত্যা করে।
একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রীসহ চারজনকে হত্যাসহ একাধিক হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজী ওরফে দাঁত ভাঙা পলাশকে (৪১) আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ভাড়াটে সন্ত্রাসী পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজী ওরফে দাঁত ভাঙা পলাশসহ ছয় সন্ত্রাসী সুলতান, তার স্ত্রী ও তাদের দুই নাতীকে কুপিয়ে হত্যা করে। মূলত জমির নিয়ে বিরোধে এ হত্যাকাণ্ড হয়।
জমির বিরোধ নিয়ে ছোট ভাই সুলতানকে হত্যা করতে দাঁত ভাঙা পলাশের সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকা ও এক বিগা জমির বিনিময়ে চুক্তি করেন মমতাজ। এরপর পলাশের নেতৃত্বে নজরুল ওরফে মনজু, আমির, জাকির, জালাল ওরফে পলাশ, হাসমত ও মমতাজ মিলে ২০১৪ সালে ১৩ জানুয়ারি গভীর রাতে ভুরুঙ্গামারির দিয়াডাঙ্গায় মমতাজের বাড়িতে বসে সুলতানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি রাতে পলাশসহ ছয় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী মুখোশ পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সুলতানকে কুপিয়ে হত্যা করে।
সুলতানকে কোপানোর শব্দে তার স্ত্রী হাজেরা বেগম চলে এলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় পাশের ঘরে থাকা তাদের দুই নাতনি রুমানা ও আনিকাকেও হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
পরবর্তীতে একই পরিবারের ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা করে ঘটনায় নিহত সুলতানের ছেলে হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ভুরুঙ্গামারি থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় কিছুদিন পর ভুরুঙ্গামারিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্য একটি হত্যা মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে সপরিবারে সুলতান হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হয়। এরপর এ ঘটনায় একে একে অন্য আসামিদের গ্রেফতার করা হলেও আত্মগোপনে চলে যায় দাঁত ভাঙা পলাশ।
ঘটনার তদন্ত শেষে মমতাজ উদ্দিন, পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজীসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরবর্তীতে বিচারিক আদালত ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পলাতক আসামি দাঁত ভাঙা পলাশসহ ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন এবং অপর একজনকে খালাস দেওয়া হয়৷
এছাড়া, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বগুড়ার শেরপুরের মির্জাপুর এলাকায় মাইক্রোবাস চুরির উদ্দেশে মাইক্রোবাসের চালক নুরুল হককে হত্যা করে পলাশ গাজী ও তার সহযোগীরা। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ বছরের নভেম্বর মাসে আদালত পলাশ গাজীসহ ৯ জন আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার পলাশের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি গ্যারেজে কাজ করত। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে লাইসেন্স ছাড়া কাভার্ডভ্যান চালানো শুরু করে। গ্রেফতার পলাশ মূলত ২০০৯ সাল থেকে অপরাধ কর্মকাণ্ড শুরু করে। সে সময় তিনি একটি ডাকাত দল গঠন করেন।
একটি পুরাতন মাইক্রোবাস নিয়ে ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি ও বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ শুরু করে। এরপর থেকে তার নেতৃত্বে একটি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর দল হয়ে উঠে। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার মহাসড়কে ডাকাতি, খুন ও মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাত।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আটক পলাশ গাজীর সপরিবারে সুলতান হত্যাকাণ্ড ছাড়াও তার বিরুদ্ধে পটুয়াখালীর বাউফল থানায় ২০১৫ সালে হত্যা চেষ্টা মামলা, গাজীপুরের কালীগঞ্জ সড়কে ২০১৫ সালে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা, রাজধানীর মতিঝিল এলাকার সড়কে ২০১৬ সালের ভুয়া ডিবি পরিচয়ে একটি ডাকাতি ও একটি অস্ত্র মামলা, ২০১৭ সালে চুরি ও ভাঙচুরের দুটি মামলা এবং রাজধানীর চকবাজার থানায় ২০১৯ সালে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে একটি হত্যা মামলাসহ তার বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
পিএম/জেএইচ