ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাবনায় দর্শনার্থীদের সমাগমে মুখরিত পুষ্পমেলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
পাবনায় দর্শনার্থীদের সমাগমে মুখরিত পুষ্পমেলা

পাবনা: প্রতি বছরের মতো এবারো পাবনায় শুরু হয়েছে তিন সপ্তাহব্যাপী পুষ্পমেলা ও প্রর্দশনী। শীতের শুরু থেকেই নার্সারি মালিকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা জাতের ফুলের চারা ও বীজ সংগ্রহ করে এই মেলার আয়োজন করে থাকেন।

সংগৃহীত নানা জাতের ফুলের চারা ও বীজ নিয়ে সাধারণ পুষ্পপ্রেমীদের জন্য মেলাতে নিয়ে আসেন তারা। জেলার প্রায় অর্ধশত নার্সারি মালিকদের করা সংগঠন পুষ্পমেলা বাস্তবায়ন কমিটি এই পুষ্পমেলার আয়োজন করেছে।

নানা রঙের নানা জাতের দেশি ও বিদেশি ফুলের সমাহার নিয়ে পাবনায় শুরু হয়েছে পুষ্পমেলা ও প্রর্দশনী। ফুল ভালোবাসার প্রতীক, ফুল প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানানোর অন্যতম মাধ্যম। দেশে এক সময় শখের বশে ফুলের বাগান করতো অনেকেই আর এখন সেটি পেশায় পরিণত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন নার্সারি ও পুষ্পমেলা থেকে ফুলের বীজ ও চারা সংগ্রহ করে নিজেরাই বাগান তৈরি করছেন।

একদিকে যেমন মনের খোরাক যোগাচ্ছে অন্যদিকে সেটি বিক্রি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন অনেকে। এবারের মেলাতে অর্ধশত ফুলের সমাহার রয়েছে। ছোট বড় দেশি বিদেশি নানা জাতের নানা নামের বাহারি ফুলের চারা মিলছে মেলাতে। মন ভালো করা আর বিনোদনের সুন্দর একটি স্থানে পরিণত হয়েছে পুষ্পমেলা প্রাঙ্গণ। নানা শ্রেণীপেশার নারী-পুরুষ, কিশোর- কিশোরী থেকে শুরু করে শিশুরাও ঘুড়তে আসছেন মেলাতে। ফুলের সঙ্গে খেলা করছেন আর পছন্দের ফুলের চারা সংগ্রহ করছেন তারা। এবারের পুষ্পমেলাতে হলুদের সমাহার নিয়ে গাঁদা, হাইব্রিড গ্লাডিওলাস, পানচাটিয়া, নয়ন তারা, সাইলেসিয়া, বসু গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, তারামনি, ফায়ারবল, সাদা গাঁদা, পুস্পলিকা অন্যতম।

এছাড়া মেলাতে হাইব্রিড জাতের মালটা, কমলা, বড়ই, জামবুড়া গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে। শহরের শৌখিন পুষ্পপ্রেমীরা পছন্দের ফুল ও ফলের চারা সংগ্রহ করছেন মেলা থেকে। বাড়ির আঙিনা ও বারান্দা থেকে শুরু করে ছাদ বাগানে শোভা পায় এই সব ফুলের গাছ।

মেলায় ফুলের চারা কিনতে আসা ক্রেতা মাসুদ পারভেজ ও মেহেদী হাসান বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাড়ির আঙিনাতে ফুল ও ফলের বাগান করে আসছি। এখন তো নিজেদের ছাদেও বাগান করেছি আমরা অনেকেই। প্রতি বছর এ সময়ে পুষ্পমেলার মধ্যদিয়ে এক সঙ্গে অনেক ফুলের সমাহার হয়ে থাকে। পছন্দ করে দেশি ও বিদেশি ফুলের চারা সংগ্রহ করি। তবে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে আগের মতো আর সেই ফুলের দেখা মিলছে না। প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করলে হয়তো নতুন প্রজন্মের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হতো বাগান করার। আশা করছি কর্তৃপক্ষ এ দিকে দৃষ্টি দেবেন।

পুষ্পমেলা নিয়ে কথা হয় সংস্কৃতিক সংগঠক কমরেড জাকির হোসেনের সঙ্গে তিনি বলেন, এই জেলাতে আগে আবু জাফর পুষ্প প্রর্দশনী হতো। সেই সময়ে বাহারি ফুলে প্রাণ জুড়িয়ে যেত। জেলার শৌখিন পুষ্পপ্রেমীরা নিজেদের বাড়ি অথবা ছাদে ফুলের বাগান করতো। শীতের সময়ে সবাই বাহারী ফুল নিয়ে পুষ্পমেলায় আসত।

জেলা নার্সারি মালিক সমিতি ও পুষ্পমেলা বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বলেন, আগে শুধু ফল, ওষুধি ও কাঠের গাছের চারা বিক্রি হতো। এখনো বাণিজ্যিকভাবে ফুল ও ফলের চারা বিক্রি হচ্ছে। করোনা মহামারির সময়ে আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। চেষ্টা করছি পুস্পমেলার মধ্য দিয়ে এই অবহেলিত ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা। তবে বিগত দিনগুলিতে আমাদের বেঁচা বিক্রি বেশ ভালো হয়েছে। এবারো মানুষ প্রথম থেকেই ফুল ও ফলের চারা ক্রয় করছেন। সরকার ও কৃষিবিভাগ যদি আমাদের পাশে থাকে তবে প্রাকৃতি পরিবেশ তৈরি করতে আমরা কাজ করতে পারবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চিত্তবিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে এই পুষ্পমেলা। অন্যান্য জেলার মত যদি পাবনাতেও বাণিজ্যিকভাবে কোনো কৃষক বা নার্সারি মালিকরা ফুল চাষে এগিয়ে আসে তবে কৃষিবিভাগ তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেবে। জেলা পুষ্পমেলা বাস্তবায়ন কমিটি এই মেলার আয়োজন করে আসছে। এই মেলার মাধ্যমে ক্রেতারা ভালো জাতের ফুল ও ফলের চারা কিনতে পারছেন।

জেলা শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল (স্বাধীনতা চত্বরে) চত্বরে চলছে এই পুষ্পমেলা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে মেলার কার্যক্রম। আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মাঠের চার পাশে ফুলের সমাহার এ যেন পুষ্পের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া।

মেলাতে ফুলের চারা পাশাপাশি ফলের চারা, বনশাই, অর্ধশত প্রজাতের ক্যাকটাস পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতারা তাদের পছন্দমত ফুল ও ফলের চারা সংগ্রহ করছেন মেলা থেকে। তাইতো ক্রেতা সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুস্পমেলা প্রাঙ্গণ। ২৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া মেলা শেষ হবে আসছে বছরের ১৩ই জানুয়ারি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।