ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

যে রনিকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন, তার হাতেই খুন হন শারমীন বেগম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
যে রনিকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন, তার হাতেই খুন হন শারমীন বেগম গ্রেপ্তার করার পর একেক সময় একেক কথা বলছেন রনি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ফারহান রনিকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন শারমীন বেগম ওরফে হরলুজা বেগম (৪৭)। রনির স্বজনের জায়গাতেই স্বামী-সন্তানদের নিয়ে থাকতেন শারমীন।

পারিবারিকভাবেও তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। এ অবস্থায় শারমীনকে এভাবে পৈচাশিকভাবে হত্যার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। ঘাতক রনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন তারা।

এদিকে এ ঘটনায় শারমীন বেগমের বড় মেয়ে রুমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।  

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রনিকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়।  

পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ড নিয়ে রনি অসংলগ্ন কথা বলছেন। তিনি বলতে চাইছেন শারমীন তাকে তাবিজ করেছিলেন। তার এক মেয়েকে রনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। এসব কারণে তিনি তাকে হত্যা করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ফারহান রনি মাদকাসক্ত। একই সঙ্গে তিনি চুরি, ছিনতাইয়ে জড়িত। পরিবারও তার জ্বালায় অতিষ্ঠ। গত কিছুদিন ধরে রনির বাবা যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ ভূইয়া বাড়ির বাইরে অবস্থান করছেন।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজীর বাজারে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন শারমীন।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার গাজীর বাজার এলাকার এনামুল ও তার ভাই রোমানদের বাড়ি থেকে রাজহাঁস চুরি হয়। দুই ভাইসহ কয়েকজন মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে হাঁস খুঁজতে এসে রনির বাবা শাহনেওয়াজ ভুইয়ার জায়গায় পরিত্যক্ত টিনের ভাঙা ঘর থেকে ধোঁয়ার গন্ধ পান। কিসের ধোঁয়া জানতে চাইলে সেখানে থাকা ফারহান রনি জানান যে তিনি পাতা পোড়াচ্ছেন। এ কথা বিশ্বাস হয়নি হাঁসের মালিক এনামুল ও রোমানের। তাদের ধারণা ছিল, হয়তো তাদের রাজহাঁস পোড়ানো হচ্ছে। এজন্য তাদের সঙ্গে থাকা চাচাতো ভাই উবায়দুল ঘরের ভেতরে কী দেখতে চান। এতে রনি ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের মারার হুমকি দেন এবং এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হলে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। এতে সন্দেহ হলে গ্রামের লোকজন মিলে ভেতরে গিয়ে গর্তে পুড়তে থাকা মানুষের লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ বের ওই যুবক।  

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক হত্যার কাহিনী। শারমীনের মাথা কেটে পাশের জমিতে পুঁতে রাখেন রনি। আর দেহ পরিত্যক্ত ঘরে গর্ত করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে রনির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাশের একটি পুকুরপাড়ের জমিতে পুঁতে রাখা মাথা উদ্ধার করা হয়।

রনির স্বীকারোক্তি মতে উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি। শারমীন উপজেলার হীরাপুর গ্রামের কলোনি এলাকার মো. নুরুল ইসলাম বেপারীর স্ত্রী।  

শারমীনের বড় মেয়ে রুমার দাবি, চুরি করা হাঁস রান্নার জন্য তার মাকে মঙ্গলবার ভোরে ডেকে নিয়ে যান রনি। মা হয়তো এতে রাজি না হওয়ায় তাকে এভাবে হত্যা করা হয়।  

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মে. ছমিউদ্দিন জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। রনি একেক সময় একেক কথা বলছেন। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।