ঢাকা: দেশের তিন কোটি মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে মানসিক স্বাস্থ্য রিপোর্ট প্রকাশ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কৌশলপত্র প্রণয়ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন
জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই মানসিক স্বাস্থ্য যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, ততটা পায়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানসিক রোগ পৃথিবীতে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটায়। ১০ লাখ মানুষ সারা পৃথিবীতে মানসিক রোগে মারা যায়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন কারণে মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত। দেশের ১৮ শতাংশ মোট জনসংখ্যার তিন কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত। ১২ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত।
তিনি আরও বলেন, পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে, অন্যরা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। দুর্ঘটনা বা অঘটনের কারণেও মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। কোন নারী নির্যাতিত হলে মানসিক সমস্যার আক্রান্ত হয়। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করোনাই অনেকেই মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এ কে এম আমিরুল মোর্শেদ।
অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ।
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, মানসিক কষ্টে যারা ভোগেন তাদের যদি আমরা আমাদের থেকে আলাদা করে দেই, তা বাসা কিংবা হাসপাতালেই হোক, তাকে যদি আমরা এমনভাবে দেখি যে, স্বাভাবিক মানুষ না। আমরা যখন মানসিক রোগ নিয়ে কথা বলি, তখন ভাবি এটাতো অন্য এক ধরনের সমস্যা যা কখনও ভালো হবে না। এরা আমাদের পরিবারের সমাজের উৎপাদনশীল কাজে আসবে না। কিন্তু আমরা এটা চিন্তা করিনা, সভাই মানুষ, মানুষটার ভালো থাকার জন্য কি দরকার। আমরা তাকে সামাজিকভাবে এমন একটা পর্যায়ে ফেলে দেই, যে হাজার চিকিৎসা নিলেও সে স্বাভাবিক জীবনটা কোন দিন ফিরে পাবে না। মানুষের কাছে সেই সন্মানটা কোনদিন ফিরে পায় না। যাতে সে চিকিৎসা ঠিকমতো নিতে বা পেতে পারে, ঐ পরিবেশটা নেই।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, মানসিক কষ্টে যারা ভোগেন, তাদের অনেকেই সবসময় দুর্বল মনে করেন, কিন্তু তারা যে সমস্যা এবং কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন, সে অনেক শক্তিশালি। তার কাছে যে সহনশীলতা এবং শক্তি আছে, তা আমাদের সবার মধ্যে নেই।
আত্মহত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সুসাইডের কথা বলি, কেনো সে হার মানলো, কোন পরিবেশ তৈরি হয়েছিল যে তাকে হার মানতে বাধ্য করেছে, আমরা এটা চিন্তা করি না। পরিবেশে বা কোন কথা শুনে কষ্টে, সে আর বাঁচতে চায়নি। কোন পর্যায়ে সে ভাবছে আমার মরে যাওয়াটাই ভালো, আমার আর বেঁচে থাকা উচিত না, আমার কাউকে দরকার নাই, এটা কি আমরা কখনও চিন্তা করি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
আরকেআর/জেএইচ