কক্সবাজার থেকে: সশব্দ ঊর্মিমালার উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত সমুদ্রপাড়। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের উথলেপড়া সৌন্দর্য যেনো হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের।
উত্তাল ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে বা দলবেঁধে ঢেউ ছুঁয়ে হেঁটে হেঁটে কাটিয়ে দেওয়া যায় সুন্দর বিকেল। তারাভরা রাতে সৈকতে বসে সখ্য গড়া যায় গর্জনের সঙ্গে। সাগর ছুঁয়ে আসা বাতাসে শরীর-মন যে জুড়াবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে শীতের এ সময়টাতে হালকা হিমেল ভাব সে আয়োজন করবে আরও বেশি পরিপূর্ণ।
বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ডিসেম্বরের এ শেষ সময়টাতে ছুটি কাটাতে কক্সবাজারে পর্যটকদের বেশ ভিড় দেখা গেছে। সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, লাবনী ও কলাতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভরপুর পর্যটক। পর্যটকেরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন। নানা বয়সী পর্যটকরা বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক ও ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্র দর্শন করছেন। কেউ আবার টিউবে গা ভাসানো ও নোনা জলে গোসলে নেমেছেন। প্রিয়জনেরা এসব দৃশ্য মোবাইল ও ক্যামেরায় ধারণ করছেন। অনেককেই হিমছড়ি ও দরিয়ানগর সৈকতে প্যারাসাইলিংয়েও সমুদ্র দর্শন করতে দেখা গেছে।
সাগরে সাঁতরাতে চাইলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবে লাইফ গার্ড। বড় বড় ঢেউয়ের ভেতর অল্প আয়াসে কি করে ভেসে থাকতে হয় তার সহজ টিপস পাওয়া যাবে তাদের কাছে। এছাড়া সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময় ও সূর্যাস্তের পর সমুদ্রপাড়ে সময় কাটিয়েছেন অনেক পর্যটক। তাদের মতে সমুদ্রের মূল সৌন্দর্যই সন্ধ্যায়।
এ বিষয়ে ইমরান হোসেন নামে এক পর্যটক বলেন, শুধু সমুদ্র সৈকত নয়, পাশাপাশি দিগন্তজোড়া বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, মেঘ, সারি সারি ঝাউবন, সৈকতের বুকে আছড়ে পড়া ছোট বড় ঢেউ, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে জেলেদের কর্মচাঞ্চল্য, সৈকতের সাগরলতা ফুল, পূর্ব পাহাড়ের পেছন থেকে বেরিয়ে আসা সূর্য, আবার সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের মায়াবি রূপ; এসব সৌন্দর্যের আয়োজন নিয়েই কক্সবাজার এক অনন্য সৌন্দর্য।
সপরিবারে ঘুরতে আসা প্রবাসী আবদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি কক্সবাজার। পরিবারের সদস্যরা বেশ মজা পাচ্ছে, বাচ্চারা বেশ আনন্দ করছে- এটাই প্রশান্তি। দীর্ঘ সৈকত ছাড়াও এখানকার পাহাড়, বনভূমি, সুবিশাল আকাশ, সমুদ্রের তর্জন-গর্জন দেখার মতো।
এদিকে কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে জেট স্কি আর শখের সার্ফিংয়ের সুযোগ। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকলে পানিতে না নেমে পাড়ে বেড়ানোই ভালো।
লাবনী, সুগন্ধা আর কলাতলী পয়েন্টেই পর্যটকদের সমাগম সবচেয়ে বেশি। তবে মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে ইনানি, হিমছড়ির দিকেও চলে যান কেউ কেউ। একপাশে সাগর আর এক পাশে পাহাড় হওয়ায় মেরিন ড্রাইভ রোড দিন দিনই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
এছাড়া সুগন্ধা পয়েন্টে সাগর পাড়ে গড়ে ওঠা বার্মিজ মার্কেটে সস্তায় সারা যাবে কেনাকাটা। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি, আচার, চকলেটসহ রকমারি বার্মিজ পণ্যের জন্য এ মার্কেটের খ্যাতি দেশজুড়ে। আর বর্তমানে থার্টি ফার্স্ট নাইটসহ বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে কনসার্টসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হচ্ছে কক্সবাজার সৈকতে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
এইচএমএস/আরআইএস