ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতিশ্রুতি-প্রত্যাশায় অর্ধশতাব্দি, আজও ভরসা কাঠের সাঁকো

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
প্রতিশ্রুতি-প্রত্যাশায় অর্ধশতাব্দি, আজও ভরসা কাঠের সাঁকো

গাইবান্ধা: প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি আর ভোটারদের প্রত্যাশায় পেরিয়ে গেছে অর্ধশতাব্দি। আজও বাস্তবায়িত হয়নি কাঙ্ক্ষিত সেতু।

তাই নড়বড়ে কাঠের সাঁকোই ভরসা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোরপুর ইউনিয়নের ২০ গ্রামের মানুষের।  

তবে ব্রিজ নির্মাণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার দামোরপুর ইউনিয়নের চান্দের বাজার এলাকার ঘাঘট নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে একটি কাঠের সাঁকো। এর ওপর দিয়েই প্রতিনিয়ত হেঁটে, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল নিয়ে চলাচল করছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। রিকশা-ভ্যানে মালামালসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইব্রার ঘাটে প্রায় এক দশক আগে ডিঙি নৌকায় করে মানুষ পারাপার হতো। সে সময় নৌকাডুবিসহ নানা দুর্ভোগের শিকার হতেন তারা। এরপর স্থানীয়দের আর্থিক সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করা হয় কাঠের সাঁকোটি। মানুষ-যানবাহন চলাচলে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া সাঁকোটি প্রতি বছরে পুনরায় সংস্কার করতে হয়।  

ভুক্তভোগীরা জানান, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দি পেরিয়ে গেছে। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এদেশে পদ্মাসেতুর মতো বিশালাকার স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। একই দেশে থেকে আমরা আজও অবহেলিত। দেশে একের পর এক সরকার বদলায় কিন্তু আমাদের দুর্ভোগ লাঘবে ভূমিকা রাখে না কেউ। প্রতিবার নির্বাচন এলেই ইব্রার ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতা দেন সরকার ও বিরোধী দলের প্রার্থীরা। নির্বাচিত হওয়ার পর কথা রাখেননি কেউই।

তাদের অভিযোগ, অতীতের ধারাবাহিকতায় সরকারি দলের সাবেক এমপি মরহুম ডা. ইউনুস আলী সরকার ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহারিয়া খান বিপ্লবসহ দায়িত্বশীল অনেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ইব্রার ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু অদ্যাবধি কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।

দমোদরপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেকেন্দার আলী জানান, এলাকার অসংখ্য শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই নড়বড়ে সাঁকো পারাপার হয়ে থাকে। একই সঙ্গে মোটরসাইকেল ও মালামাল নিয়ে রিকশা-ভ্যানও পারাপার হয়ে থাকে। ফলে যেকোন সময় সাঁকো ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।  

ইব্রার ঘাট এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান আলী জানান, ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বরাবরে একাধিকবার আবেদন করেও কাজ হয়নি। ব্রিজটি নির্মাণ হলে লেখাপড়া, ব্যবসা বাণিজ্যসহ কৃষিক্ষেত্রে দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি গতি আসবে অন্য সব কাজে। সর্বপরি দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হলে অত্র এলাকার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে।

সাদুল্লাপুর উপজেল পরিষদ চেয়ারম্যান সাহারিয়া খান বিপ্লব বলেন, এ বিষয়টিতে আমি অবগত আছি। ইব্রার ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা সাদুল্লাপুরের চাঁন্দের বাজার ছাড়াও পলাশবাড়ী উপজেলার হাজীরঘাট ও ঋষির ঘাটে সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ওই তিন স্থানে ব্রিজ-সেতু নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রায় প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে ঘুরছি-কথা বলছি। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।