ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাজবাড়ীতে ৬৪ জন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পাচ্ছে ‘বীর নিবাস’

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২৩
রাজবাড়ীতে ৬৪ জন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পাচ্ছে ‘বীর নিবাস’

রাজবাড়ী: অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের অনন্য এক উদ্যোগ ‘বীর নিবাস’। রাজবাড়ী জেলার ৫ উপজেলায় ‘বীর নিবাস’ পাচ্ছে ৬৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার।

এর মধ্যে শেষ হয়েছে নির্মান কাজ। মাথা গোজার নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে খুশি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. সামাদ মোল্লা। কদিন আগেও পরিবারের সবাই কে নিয়ে থাকতেন একটি টিনের চৌচালা ঘড়ে। জীবনের এই পড়ন্ত বিকেলে পুরাতন ঘড়ের জায়গায় সরকারি ভাবে পেয়েছেন নতুন একটি পাকা দালান বাড়ি ‘বীর নিবাস’। এখন পরিবারের সবাইকে নিয়ে নতুন বাড়িতে উঠবেন। এ খুশি যেন ঈদের আনন্দ থেকেও অনেক বেশি।

অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন ‘বীর নিবাস’ এর ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এরই অংশ হিসেবে রাজবাড়ীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. সামাদ মোল্লার মত রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ৬৪টি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে।  

এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ৭টি, পাংশা উপজেলায় ১০টি, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩০টি, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০টি ও কালুখালী উপজেলায় ৭টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ শেষে ৬৪টি বীর নিবাস প্রস্তুত হয়েছে। নিজেদের জমিতে সরকারিভাবে নতুন বাড়ি পেয়ে অনেক খুশি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার।

৬৩৫ স্কায়ার ফিট জায়গায় প্রতিটি বীর নিবাস তৈরি হয়েছে। প্রতিটি বীর নিবাসে রয়েছে দুইটি বেড রুম, একটি ড্রইং রুম, একটি ডাইনিং রুম, একটি কিচেন রুম, দুইটি বাথরুম ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ‘বীর নিবাস’ গুলো শতভাগ মান বজায় রেখে সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব শীঘ্রই বীর নিবাস গুলো উদ্বোধন করবেন এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কাছে ‘বীর নিবাস’ হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের ব্যয় হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।

গোয়ালন্দ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. সামাদ মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আজ ক্ষমতায় আছে বলেই অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। সরকার আমাদের যে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে তা অবশ্যই প্রসংশার দাবিদার। এতে করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। তারা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।  

আজ আমরা ভীষণ আনন্দিত, সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

চরবরাট এলাকার মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলীর স্ত্রী জোহরা বেগম (৬৫) জানান, আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। আমার পরিবার নিয়ে একটি বাড়ির অভাবে কষ্টে জীবন কাটাচ্ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই তিনি আমাকে একটি পাকা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। আমি অনেক খুশি।

ছোট ভাকলা ইউপির চাকির তালক গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজ্জাম্মেল হক জানান, আমি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি বর্তমানে শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ। এখন আর কাজ করতে পারিনা। আমি আমার পরিবার নিয়ে টিনের ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করে আসছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই তিনি আমাকে নতুন একটি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখবে এই বাড়িটি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি।

অম্বলপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওমর আলি শেখ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতঙ্গতা জানাই আমার মত অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি সরকারি ভাবে ‘বীর নিবাস’ নামে পাকা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। রাজবাড়ী জেলার সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি।

গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ মন্ডল বাংলানিউজ কে জানান, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০টি বীর নিবাস নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ডিজাইন মোতাবেক জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিদের্শনায় অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এই বীর নিবাসগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে ঘরের নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধনের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম মনোয়ার মাহমুদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন বাস্তবায়নে সরকার সারা দেশে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তারই অংশ হিসেবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস নির্মাণ করেছেন সরকার।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলার ৬৪টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ। এর মধ্যে পাংশা উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১০টি, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩০টি, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ৭টি, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০টি ও কালুখালি উপজেলায় ৭টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। শহীদ ও প্রায়াত এবং অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রী সন্তানদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে একেকটি পাকা ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে জেলার ৬৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি এসব ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  

রাজবাড়ী জেলার পাঁচ উপজেলায় ‘বীর নিবাস’ পাচ্ছে ৬৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে নির্মাণ কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব শীঘ্রই বীর নিবাস গুলো উদ্বোধন করবেন তারপর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কাছে ‘বীর নিবাস’ হস্তান্তর করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।