ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিদায়ী বছরে সড়কে প্রাণ গেছে ১০ হাজার জনের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২৩
বিদায়ী বছরে সড়কে প্রাণ গেছে ১০ হাজার জনের জাতীয় প্রেসক্লাবে সেভ দ্য রোডের সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৫২ হাজার ৪৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০ হাজার ১০৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৯৬৭ জন।

সোমবার (২ জানুয়ারি) ‘২০২২ সালের রেল, নৌ ও সড়কপথ দুর্ঘটনার সংখ্যা, কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠ ও সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সেভ দ্য রোড। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ২০২২ সালের রেল, নৌ ও সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক প্রতিবেদন তুলে ধরেন সেভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা। তিনি জানান, দেশের ২৭টি পত্রিকা, ১৪টি ইলেক্ট্রনিক চ্যানেল ও ১২টি অনলাইনের নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর দেশে মোট ৫৫ হাজার ৩০৫টি সড়ক, নৌ ও রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। গড়ে প্রতিদিন ১৫১টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৭ জন, আহত হয়েছেন ১৫৬ জন।

এতে আরো বলা হয়, ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে সড়কে। মোট ৫২ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১০ হাজার ১০৮ জন, আহত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৯৬৭ জন। নিহতদের মধ্যে চালক ছিলেন ৭৪ জন, চলকের সহকারী ছিলেন ৩৮ জন, নারী ছিলেন ৪ হাজার ২২ জন, শিশু ছিলেন ১ হাজার ১২ জন, শিক্ষার্থী ছিলেন ৮১২ জন, সাংবাদিক ছিলেন ৮ জন, চিকিৎসক ছিলেন ২৭ জন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছিলেন ২৫ জন ও রাজনৈতিক নেতা ছিলেন ৫৬ জন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সড়কপথে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে। যা সংখ্যায় ১৭ হাজার ৩৯৩টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৯৪৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৮৮৮ জন।

এছাড়া ১২ হাজার ৯৪২টি বাস দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৯৪ জন, আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৫০৯ জন। ৮ হাজার ৭০০টি ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৩১৮ জন, আহত হয়েছেন ৭ হাজার ২৮৯ জন। অন্যান্য যানবাহনে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৩ হাজার ১৩টি। এতে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৫৭৪ জন, আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৬৫১ জন।

নৌ দুর্ঘটনার বিষয়ে সেইভ দ্য রোডের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ১ হাজার ৬৫৫টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান ৪০৫ জন। আর এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৭৬৮ জন। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন ৪৬ জন।

রেল দুর্ঘটনার বিষয়ে বলা হয়, গত এক বছরে রেল পথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৭৮০টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ হাজার ১১০ জন।

আকাশ পথে গত বছর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে সচেতনতামূলক এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সেইভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা বলেন, সড়কপথে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে কেবল যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক ও সহযোগি না থাকার কারণে। রাজধানীতে তীব্র গণপরিবহন সংকট, ফিটনেসবিহীন-ত্রুটিপূর্ণ বাস-টেম্পুর অবাধ চলাচলের কারণেও ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনা রোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ ঢাকার রাজপথে সুপরিকল্পিতভাবে পাবলিক বাস বৃদ্ধি এবং যাত্রী হয়রানী-দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। শুধু চালক নয়, আমাদের পথচারি ও যাত্রীদেরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

এছাড়া প্রাথমিক-মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্য বইয়ে ‘পদ চলাচলে করণীয়’ নিয়ে অধ্যায় রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন শান্তা ফারজানা।  

সড়ক, নৌ ও রেল পথে দুর্ঘটনা রোধে ৭টি দাবিও জানায় সেইভ দ্য রোড। তাদের দাবিগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু কাপ ফুটবল খেলা শেষে বাড়িতে পাওয়ার পথে মিরেরসরাইতে নিহত অর্ধশত শিক্ষার্থীকে স্মরণিয় করে রাখতে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে; ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে; সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেসবিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ ও হেলপারদ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে; স্থল-নৌ- রেল ও আকাশ পথে দুর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ সরকারিভাবে দিতে হবে এবং হতাহতদের ইন্স্যুরেন্স স্কিমের ব্যবস্থা করতে হবে; ট্রান্সপোর্ট ওয়াকার্স রুল' বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন' বাস্তবায়ন করতে হবে; পথ দুর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মাধ্যমে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সব পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে; ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতুসহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোনো না ঝরে।  

সেইভ দ্য রোডের চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনামের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, আইয়ুব রানা, জিয়াউর রহমান জিয়া, সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২২
এসসি/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।