ব্রাহ্মণবাড়িয়া: একের পর এক ঘটনায় অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারাঙ্গনে।
একদিকে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অশোভন আচরণের অভিযোগ, অন্যদিকে জেলা জজসহ নাজিরের অপসারণ দাবিতে আইনজীবীদের আদালত বর্জন।
আরেকদিকে বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ, কর্মচারীদের মারধর, মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের কর্মসূচী।
সব মিলিয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারাঙ্গনে। এতে দুর্ভোগের শিকার হয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচার প্রত্যাশীরা।
আদালত প্রাঙ্গণে যখন এমন অবস্থা, তখনই সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে আদালতে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও। ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি ১ জানুয়ারির।
এতে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে এজলাস চলাকালে জনৈক আইনজীবী এসে তার আদালত বর্জনের কথা জানান। এ নিয়ে যখন বিচারকের সঙ্গে জনৈক আইনজীবীর বাদানুবাদ চলছিল, তখন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ কয়েকজন আইনজীবী এসে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং তাকে আঙ্গুল দেখিয়ে এজলাস থেকে নেমে যেতে বলেন।
তবে আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূইয়ার দাবি, তিনি বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেননি। ভিডিওটি সম্পাদনা (এডিট) করা হয়েছে।
তানভীর ভূইয়া ব্রাহ্মবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, এজলাসে অকথ্য গালিগালাজের ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং মর্মাহত। বিচারককে এজলাস থেকে নামতে বাধ্য করা সংবিধান ও আইনবিরোধী। এটা একাধারে ফৌজদারি অপরাধ, আদালত অবমাননা এবং পেশাগত অসদাচরণ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গেল ১ ডিসেম্বর একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বাকবিতণ্ডা হয়। সময় পার হয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী মামলাটি নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় গত ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি। এ ঘটনায় আদালতে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে গত ৩ জানুয়ারি বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন সভা করে ৪ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি ও মানববন্ধ কর্মসূচি পালন করে। আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে এসে বিচারবিভাগীয় কর্মচারীদের মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এসময় শত শত আইনজীবী জেলা বার এসোসিয়েশন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এক পর্যায়ে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে জেলা জজের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে ওই দিন (৪ জানুয়ারি) বিকেলে আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ এর বিচারক ও আদালতের নাজিরের অপসারণের দাবিতে ৩ দিনের জন্য আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৩
এনএস