পাথরঘাটা, (বরগুনা): দুই ভাই একই বাড়িতে বসবাস করছেন। সুখে শান্তিতেই চলছিল দুই ভাইয়ের সংসার।
বলছিলাম সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদ সংলগ্ন পাথরঘাটার পদ্মা গ্রামের আব্দুর রহিম বেপারী ও আমিন বেপারীর পরিবারের কথা।
মুহূর্তেই তাদের সব আনন্দ আর সুখ ইতিহাস হয়ে গেল। রহিম বেপারীর ছেলে ইউসুফ ও আমিন বেপারীর ছেলে বাইজিদ এখন অজানার পথে...! এখনও জীবিত না মারা গেছেন এমন প্রশ্ন স্থানীয় জনমনে।
বলেশ্বর নদ পাড়ে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বসবাস তাদের। নদীর গর্জন শুনেই অন্যদের মতো সকালে ঘুম ভাঙ্গে তাদের। গত কয়েকদিন ধরে তাদের আর সেই নদীর গর্জনে ঘুম ভাঙ্গে না। দুই ভাইয়ের চোখে আর ঘুম আসে না। প্রতি মুহূর্ত আঁতকে উঠেন তারা। সন্তানের অধীর অপেক্ষায়..। ছেলেরা আসবে, আব্বা বলে ডাকবে, বুকে জড়িয়ে নেবে। কিন্তু এখনও আসছে না।
পরিবারের অন্যদের মতো দুই ভাইও মূর্ছা যাচ্ছেন। কখনও ঘরে, কখনও দৌড় দিয়ে বেড়িবাঁধের ওপরে চলে যাচ্ছেন। আবার কখনও দুই ভাই দৌড় দিয়ে নৌকার ঘাটে চলে আসে। নৌকার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন।
সরেজমিন পদ্মা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দুই ভাইয়ের আর্তনাদ। নৌকা ঘাটে গিয়ে দুই আকুতি যেন থামছেই না। তাদের আকুতি দেখে স্থানীয়রা সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসেন। দুই ভাই গলা জড়িয়ে কাঁদছেন; তাদের এমন আর্তনাদ আর আকুতি এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আব্দুর রহিম বেপারী বলেন, ‘আল্লায় এমন বিপদ আমাগো দুই ভাইয়ের দিছে। এত কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। মোগো কপাল পোড়ছে...। ’
তিনি বলেন, ‘এত দিনেও মোর বাবারা আয়ে নাই, মনে হয় বাইচা নাই, লাশটা পাইলেও মনরে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। ’
ইউসুফ ও বাইজিদের ফুফাতো ভাই মো. বেল্লাল বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নদীতে ১০ জন বিচ্ছিন্নভাবে অনুসন্ধান করছি। সোমবার (৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত কোনো সন্ধান পায়নি। আজও সকালেই নেমেছি। ’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুই জেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবারের কষ্টের কান্নায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
এএটি