ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদগঞ্জে ফের অবৈধ ভাটা চালু, ক্ষতি কৃষিজমি-সড়কের

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৩
ফরিদগঞ্জে ফের অবৈধ ভাটা চালু,  ক্ষতি কৃষিজমি-সড়কের

চাঁদপুর: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বালিথুবা গ্রামে ফসলি জমিতে বন্ধ করে দেওয়া অবৈধ ইটভাটা ফের চালু করা হয়েছে। এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কৃষি আবাদ এবং মূল্যবান গ্রামীন পাকা সড়ক।

 

ট্রাক্টর দিয়ে জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে আসার সময় সড়কে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কৃষিজমি রক্ষার্থে ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষক, সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

সম্প্রতি সরেজমিন উপজেলার বালিথুবা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হাজী আব্দুল ওয়াদুদ অ্যাণ্ড মিয়াজী ব্রিকস আবার চালু করা হয়েছে। এর আশপাশে রয়েছে বহু বসতবাড়ী। ওই গ্রামের বিভিন্ন ফসলি জমির ওপরের অংশের মাটি কেটে আনা হচ্ছে ইটভাটায়। মাটির কাজে বাহন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ ট্রাক্টর। ট্রাক্টর চলাচলের কারণে এলজিইডির নির্মিত পাকা সড়ক ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফসলি জমির মাটি কাটায় পাশের জমিগুলোও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

বালিথুবা গ্রামের কৃষক মহররম বেপারী বলেন, ইটভাটার কারণে আমাদের পাকা সড়কটি ভেঙে গেছে। গত বছর আবার সড়ক সংস্কার হয়েছে। এখন আবার ট্রাক্টর চলার কারণে ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ইটভাটার কারণে আমাদের ফসল উৎপাদনও কয়েকগুন কমেছে।

একই এলাকার কৃষক আব্বাছ বেপারী বলেন, ট্রাক্টর চলাচলের কারণে আমাদের সন্তানরা সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারে না। স্কুলে যাওয়ার সময় অভিভবাকরা দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকে। কারণে এই ট্রাক্টরের চাপায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে।

ওই গ্রামের পার্শ্ববর্তী এলাকার গাজী বাড়ির নুর মোহাম্মদ গাজী বলেন, ইটভাটা গ্রামের মাঝখানে করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কৃষি আবাদ ও সড়ক সব কিছুরই ক্ষতি হচ্ছে ইটভাটার কারণে। এই ধরনের অবৈধ ইটভাটা প্রশাসনের এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন।

কৃষক অমূল্য সূত্রধর বলেন, ১০ বছর আগে এই ইটভাটা চালু হয়ি। এই ভাটা এলাকার কৃষিজমি ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার জমির পাশে সর্দার বাড়ির কয়েকজন গর্ত করে মাটি বিক্রি করেছে ইটভাটায়। এ কারণে আমার জমিগুলো ভেঙে পড়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়ে কোনো লাভ হয়নি।

বালিথুবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি ইটভাটার মালিককে এটি চালু না করার জন্য বহুবার অনুরোধ করেছি। এলাকার কৃষিজমি ও সড়ক নষ্ট হচ্ছে। কৃষকরা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমি বিষয়টি সংশিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব অবৈধ এই ইটভাটা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মেসার্স মা-রহমত ব্রিকস নামে ইটভাটার মালিক আলম তপদার বাংলানিউজকে বলেন, আগে যারা ইটভাটা চালাতেন, তাদের কাছ থেকে আমি ভাড়া নিয়েছি। তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমার সব কাগজপত্র আছে। যত পারেন সংবাদ প্রচার করেন, আমার কোনো সমস্যা নেই।

চাঁদপুর সদরের জ্যেষ্ঠ কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাটা করা হলে ওই জমিসহ আশপাশের জমির ক্ষতি হয়। ইটভাটার আশপাশে ফলের গাছ থাকলে সেগুলোরও ফলন কমে যায়। এ বিষয়ে আমি অনুরোধ করব-গ্রামের ফসলি জমিতে ইটভাটা না দিয়ে নদী কেন্দ্রিক করা উচিত এবং মাটিও অন্য উপায়ে সংগ্রহ করা উচিত। তাহলে আমাদের ফসলি জমিগুলো রক্ষা পাবে।
 
পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হান্নান বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় ৯৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি বৈধ। গত বছর আমরা অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের পর এ বছর ১৫টি বন্ধ রয়েছে। অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে। বালিথুবা গ্রামের হাজী আব্দুল ওয়াদুদ অ্যাণ্ড মিয়াজী ব্রিকস ইটভাটা অনেক আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। জানতে পেরেছি আমাদের কোনো ধরনের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া আলম তপাদার নামে ব্যবসায়ী মেসার্স মা-রহমত ব্রিকস নামে অবৈধভাবে ইটভাটা চালু করেছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।