ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ জুলাই ২০২৪, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘পথেঘাটে ঘুমানোর দিন আর গেল না বাহে’

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
‘পথেঘাটে ঘুমানোর দিন আর গেল না বাহে’ তীব্র শীতে খোলা আকাশের নিচে এভাবেই দিনরাত কাটছে এই বৃদ্ধের

ফরিদপুর: তীব্র শীতে যেখানে চার দেয়ালের ঘরে লেপ মুড়ি দিয়ে ঠাণ্ডায় কুপোকাত অনেকে, সেখানে ফরিদপুর শহরের রেলস্টেশনে খোলা আকাশের নিচেই ঘুমাতে দেখা গেল ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধকে।

ছেঁড়া কাঁথা গায়ে উসখুসকো চুলে প্রথমে দেখলে যে কেউ তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাববেন।

কিন্তু কথা বলে জানা গেল, ছিন্নমূল এক বৃদ্ধ তিনি। এ জগত সংসারে আপন বলে কেউ নেই তার।

শীতে জুবুথুবু লোকটি জানালেন সাধে আর এই তীব্র শীতে রেলস্টেশনে ঘুমাচ্ছেন না তিনি। থাকার কোনো জায়গা নেই বলেই বাধ্য হয়েছেন। এভাবেই কাটছে তার জীবন।

বৃদ্ধ বললেন, আমার নাম গোপাল চন্দ্র ঘোষ। বাহে, এই পৃথিবীতে কেউই নাই আমার। মাথা গোঁজারও ঠাঁই নাই। তাই তো, রাত হলেই এই রেলস্টেশনেই ঘুমাই।  

তাই বলে এমন খোলা আকাশে এই তীব্র শীতে? এ ছিন্নমূল বললেন,  ৭-৮ মাস আগে তাবু দিয়ে টঙ করে ঘুমাতাম। একদিন ঝড়ে সে টঙটাও উড়িয়ে নিয়ে যায়। এরপর টাকার অভাবে আর টঙ করতে পারিনি। এখন এ রেলস্টেশনের পথেরধারেই খেয়ে না খেয়ে রাত কাটছে আমার।  

ভিটে-মাটিও নেই?  বললেন, ফরিদপুর সদরের মহিলা রোড এলাকার পাশে কেশবনগর গ্রামে জন্ম আমার। বাবা-মাকে হারানোর পর বাড়ি-ঘর ও ভিটেমাটি কেড়ে নিয়েছে প্রতিবেশীরা। এরপর থেকে হোটেলে হোটেলে কাজ করে পেট চালাতাম। আর রাত হলে ঘুমাতাম পথেঘাটে। স্বল্প আয়ে একটু ভিটেমাটি ও একটি ঘর আর জুটাতে পারলাম না জীবনে। তাইতো, সেই পথেঘাটে ঘুমানোর দিনগুলো আর গেল না-রে বাহে!

পরিবারে আর কেউ কি নেই? জবাবে গোপাল চন্দ্র বলেন, না, আমার কোনো ভাই-বোন নাই। মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই বলে কোনোদিন বিয়ে করতেও সাহস মেলেনি। একা-একাই চলছি আমি। কেউ দুমুঠো দিলে খাই, না দিলে উপোস কাটে দিন।

কথাগুলো বলতে বলতে চোখগুলো তার ছলছল করছিল বৃদ্ধের।

সরকার তো আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে গৃহহীনদের ঘর উপহার দিচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করেছেন?

জবাবে এ বৃদ্ধ বলেন, সরকার যেন আমারে এ রেলস্টেশনের পাশে কয়খানা টিন দিয়ে একখান ছাপড়া ঘর করে দেয়। যাতে রাত হলে একটুখানি মাথা গুঁজতে পারি। সাথে দু-মুঠো খাবার ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে আমি সরকারকে প্রাণ খুলে আর্শীবাদ করুম।  

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালীর কাছে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ডিসি স্যারকে বলে তাকে আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ দিতে চেষ্টা করব। এছাড়া, তার ব্যাপারে সমাজসেবা অফিসের সঙ্গে কথা বলে তার জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা থাকবে। যাতে তিনি খেয়ে বেঁচে থাকতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।