ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংস্কার কাজ শেষ হলে ১০০ কিলোমিটারে চলবে ট্রেন

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
সংস্কার কাজ শেষ হলে ১০০ কিলোমিটারে চলবে ট্রেন

পাবনা (ঈশ্বরদী): উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগের একমাত্র পথ ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেলরুটের শতবর্ষী সাড়ে ৬শ ফুট লম্বা ১৫ পিয়ারের বাউজান রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজ।  

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেলব্রিজের ওপর দিয়ে আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ ১৮ জোড়া আন্তঃনগর, মেইল, লোকাল ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে।

পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নে চলনবিলের মাঝে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ গার্ডার ব্রিজের পিয়ারে বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় গত কয়েক মাস ধরে বিশেষ সতর্কতায় ১০ কিলোমিটার ধীর গতিতে এসে ট্রেন থেমে যায়।

ট্রেনের চালকের ওটিপিতে স্বাক্ষর করার পর প্রতিদিন ট্রেন পারাপার হচ্ছে। তবে সংস্কারকাজ শুরু হলেও ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ওই রেলব্রিজ দিয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ১৯ জোড়া ট্রেন চলাচলের জন্য সতর্কতা জারি থাকবে বলে জানিয়েছে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী বিভাগ। সংস্কার কাজ শেষ হলে ১০০ কিলোমিটার গতি নিয়ে পুনরায় ট্রেন চলবে। চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটের পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নে দ্বিতীয় ধাপে সংস্কারকাজ পরিদর্শনকালে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খান বাংলানিউজকে এতথ্য নিশ্চিত করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী আব্দুর রহিম, পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী, সহকারী সেতু প্রকৌশলী জুয়েল মিয়া, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ব্রিজ) হাসান আলী, উপ-সহকারী  প্রকৌশলী (পথ) আহসানুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আবু তৌহিদ সুমন।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নে চলনবিলে মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী বাউজান ব্রিজে ব্রিটিশ আমলের পুরোনো লাইন ভেঙে সিসিক্রিপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় রেললাইন। ১০৭ বছর আগের পুরাতন বেডব্লক, পিয়ারকে ভেঙে আধুনিক আঙ্গিকে গার্ডার ব্রিজে সংস্কার কাজ চলছে। পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে সংস্কারের কাজ চলমান রেখেছে প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক।  

ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ব্রিজ) হাসান আলী বাংলানিউজকে জানান, ব্রিটিশ আমলের নির্মিত রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজ পুরোনো হওয়ার কারণে ১৪টি পিয়ারই দুর্বল। ইট-চুন সুড়কি দিয়ে নির্মিত পিয়ারের বেডব্লক ভেঙে প্রতিটি পিলারের গা ঘেঁষে লোহার বেষ্টনী দেওয়া হচ্ছে। এই বেষ্টনীই মূল পিলারকে রক্ষা করবে। কাজ শুরুর পর দুটি পিলারে বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী বাংলানিউজকে জানান, সড়ক পথের ব্রিজের নির্মাণ বা সংস্কার কাজের থেকে রেল ব্রিজের সংস্কার কিছুটা ভিন্নধর্মী। ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথের বড়ালব্রিজ-উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের মাঝে চলনবিলের মাঝে বাউজান ব্রিজটি সাড়ে ৬০০ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। এখানে বর্ষা মৌসুমে ৬০ ফিট পানির নিচে ১৫টি স্প্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা শত বছরের পুরোনো সংস্কার ভেঙে নতুন আঙ্গিকে আরসিসি বেডব্লক ও পিয়ারগুলো ব্রিজের নিচ থেকে উপরের দিকে দুটি স্প্যান সম্পূর্ণ নতুন করে তৈরি করছি। আর বাকি স্প্যানগুলোতে জ্যাকেটিং ঢালাই অর্থাৎ শক্তি বৃদ্ধির জন্য চারপাশে নতুন ঢালাই দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে ব্রিজটির ওপর দিয়ে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলতে পারবে। এতে এ পথে ট্রেনগুলোর যাতায়াতে সময় ও ভোগান্তি কমে যাবে। রেলব্রিজে সংস্কারের কাজ করছে ম্যাক্স আরটিসি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

আরটিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী আলমগীর কবির বাংলানিউজকে জানান, ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে শতবর্ষের পুরোনো বাউজান ব্রিজটি সংস্কার কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচলে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ট্রেন যাওয়া-আসার সময় সেতুর কাছাকাছি পৌঁছালে লাল পতাকা দেখিয়ে শূন্য কিলোমিটার গতিতে ট্রেন থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরে ট্রেনের চালকেরা ওটিপিতে স্বাক্ষর করিয়ে ১০ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন পারাপার হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, পুরোনো বাউজান গার্ডার ব্রিজে কাজ করতে গিয়ে কিছুটা বেগ পোহাতে হয়েছে, বর্ষার সময় পানি থাকার কারণে কাজ করতে পারিনি। পরে বিলের মাঝে মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ কাজ চলছে। ট্রেন চলাচলে যেন বিঘ্ন না ঘটে তাই অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করে ব্রিজে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ এখনো ছয় মাস আছে, তবে তার আগেই কাজটি শেষ হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র পথ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঈশ্বরদী-ঢাকার জন্য দেশের বেশ গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৬টি যাত্রীবাহী ট্রেনে দেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার যাত্রী এই রেলপথ দিয়ে যাতায়াত করছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ মালবাহী ট্রেন এ পথ দিয়েই যাতায়াত করছে।  

বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল আরও জানান, ১০৭ বছর আগের নির্মিত গার্ডার ব্রিজে ১৫টি পিয়ার রয়েছে। একেকটি পিয়ারের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৪ ফিট। সাড়ে ৬শ ফিট বাউজান ব্রিজে সিসিক্রিপ দিয়ে অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করে সংস্কারের কাজ চলছে। ব্রিজটি এত বড়, যা একদিনে অস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় রেললাইন তৈরি করে কাজ শেষ করা কঠিন। ট্রেনের শিডিউল ঠিক রেখে ধাপেধাপে গার্ডার ব্রিজের ক্ষতিগ্রস্ত পিলারগুলোর সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত গতি কমিয়ে ট্রেন চললে কোনো ভয় নেই। ভ্রমণপ্রিয় ট্রেন-যাত্রীদের ঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ব্রিজটি দিয়ে ধীর-গতিতে ট্রেন চলছে। এতে কিছুটা সময় বেশি লাগছে।  

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে ১৯১৬ সালে ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মিত হওয়ার পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে যমুনা সেতুর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুটি নির্মিত হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কথা বিবেচনা করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ট্রেন চালানো শুরু করে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ফের ক্ষমতায় গেলে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে আওতায় ব্রডগেজ লাইনের পাশাপাশি মিটারগেজ রেললাইন নির্মিত করা হয়। বর্তমানে আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ ৩৬ টি যাত্রীবাহী ট্রেনে দেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার যাত্রী এই রেলপথ দিয়ে যাতায়াত করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রেলপথ মন্ত্রণালয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের শতবর্ষের পুরোনো ব্রিজগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।