ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘ফারাজ’ সিনেমা দেশের প্লাটফর্মে মুক্তি না দেওয়ার দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
‘ফারাজ’ সিনেমা দেশের প্লাটফর্মে মুক্তি না দেওয়ার দাবি

ঢাকা: ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজনের জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত ভারতীয় সিনেমা ‘ফারাজ’ যাতে দেশের প্লাটফর্মে মুক্তি না দেওয়া হয়, সে দাবি উঠেছে। দাবি করেছেন ভয়াবহ ওই ঘটনায় নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ।

পয়লা জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে কোনো সিনেমা নির্মিত হোক বা মুক্তি পাক, সেটিও চান না তিনি। এসব বন্ধে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান রুবা।

আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতে মুক্তি পাবে ফারাজ। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর শাহজাদপুরে এলিগেন্টস হাইট টাওয়ারে আবন্তিকা কবির ফাউন্ডেশনে এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানেই তিনি এ দাবি করেন।

রুবা বলেন, আমি ছয় মাস মুভিটাকে আটকে রেখেছি। তা না হলে ছয় মাস আগেই মুভিটা মুক্তি পেয়ে যেত। আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। প্লিজ, আপনারা (সাংবাদিক) মুভিটিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হতে দেবেন না। আমি জানি এই মুভিটা রিলিজ পেয়ে যাবে। তারপরও আপনাদের কাছে অনুরোধ এই মুভিটা দেশের ওটিটি প্লাটফর্মে যেন রিলিজ না হয়।

সম্প্রতি ফারাজ সিনেমার একটি ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটি বন্ধে নির্মাতাদের কাছে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছিলেন রুবা। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে আমি সিনেমাটি সম্পর্কে জানতে পারি। ২০২১ সালের ৫ আগস্ট সিনেমার পোস্টার আমার হাতে আসে। নির্মাতাদের কাছে আমি আইনি নোটিশও পাঠিয়েছিলাম। কোর্টের আদেশ থাকার পরও তারা আমাকে এখন পর্যন্ত মুভির কোনো স্ক্রিপ্ট বা সিনেমাটি দেখায়নি।

২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর লন্ডনের ফিল্ম ফেস্টিভালে ফারাজ সিনেমাটির স্ক্রিনিং করানো হয়। সেখানে রুবা আহমেদের এক প্রতিনিধি পুরো সিনেমার ডিটিইলিং দেখেছেন। তিনি দেশে ফিরে রুবার আইনজীবীকে বলেছেন, সিনেমায় অবিন্তার চরিত্রের নাম আয়শা।

রুবা বলেন, সিনেমার নাম ফারজ হওয়ায় একজনকে হিরো সাজানো হয়েছে। আর বাকিদের বোঝানো হয়েছে তারা ‘ভিলেন’। তাদেরকে বাঁচাতে গিয়ে ফারাজ নিহত হয়েছে। আমার মেয়ে কারও জন্য জীবন দেয়নি। সেখানে কি ঘটে ছিল আমরা কেউ জানি না। আর একজন ভারতীয় হয়ে বাঙালিদের তারা কেন যাচাই করবে? তারা এই সিনেমাটি বানানোর সময় কোনো পরিবারের সঙ্গে কথা বলেনি।

আমি মা হয়ে কীভাবে চাইব, আমার মেয়ের মৃত্যুকে বড় পর্দায় দেখে অন্য কেউ বিনোদন নেবে? মেয়ের জীবন কীভাবে চলে গেছে, একজন মা হয়ে কী কারও পক্ষে তা দেখা সম্ভব? এতে আমার মেয়ের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।

অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ।  ছবি: ইফফাত শরীফরুবা আহমেদ আরও বলেন, আমার মেয়ে সাধারণ জনতা। আমার মেয়ে কোনো পণ্য নয়। ও কোন কিচ্ছু না। ও অবিন্তা কবির, আমার মেয়ে। আপনারা কেউ ওকে জানতেন না। আপনারা কী আসলেই অবিন্তা কবিরকে চিনতেন? যদি ও ২০১৬ সালে মারা না যেত? চিনতেন না। আপনার ওর (অবিন্তা) নামটা জেনেছেন কারণ, শি পাসড ওয়ে দ্যাট নাইট।

সংবাদ সম্মেলনে ‘শনিবার বিকেলে’ সিনেমা সম্পর্কে তিনি কোনো কিছু বলতে রাজি ছিলেন না। তবে রুবা জানান, তিনি গণমাধ্যমের মাধ্যমে সিনেমাটি সম্পর্কে জেনেছেন।

ফারাজ সিনেমাটি নিয়ে অবিন্তা কবিরের পরিবারের আপত্তি আছে বলে জানানো হয় ফাউন্ডেশন থেকে। বাংলানিউজকে বলা হয়, সিনেমায় অবিন্তা কবির ও তার পরিবারের সদস্যদের চরিত্র উপস্থাপন করা হবে। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বিব্রত।

হলি আর্টিজানের হামলার ঘটনার পর তারা আড়ালে থাকতেন অবিন্তার পরিবার। এই প্রথম তারা গণমাধ্যমের সামনে এলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন অবিন্তা কবির। ২০১৬ সালের জুন মাসে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে খেতে গিয়েছিলেন তিনি। সেদিন জঙ্গি হামলায় ফারাজের সঙ্গে তিনিও নিহত হন। তার স্মৃতি ধরে রাখতে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।