ঢাকা, রবিবার, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যবসায় লোকসান হলেও ফল বাগানে বাজিমাত পারভেজের!

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৩
ব্যবসায় লোকসান হলেও ফল বাগানে বাজিমাত পারভেজের!

ঠাকুরগাঁও: মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায় বেশ ভালো ছাত্র ছিলেন পারভেজ। স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে চাকরি করার।

কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেই পড়াশোনার ইতি টানতে হয় তাকে। পরিবারের হাল ধরতে শুরু করেন ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রীর ব্যবসা৷ 

শুরু থেকে ব্যবসা ভালোই চলছিল পারভেজের। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভও আসছিল সন্তোষজনক।

কিছুদিন পরেই দেশে হানা দেয় মহামারি করোনা ভাইরাস। বন্ধ হয়ে যায় একমাত্র আয়ের উৎস, ব্যবসায় শুরু হতে থাকে লোকসান। পরিবারের চাহিদা মেটাতে অনবরত হিমশিম খেতে হত তাকে।  

কিছুদিন পরে চিন্তা ভাবনা বদলান পারভেজ৷ প্রত্যন্ত গ্রামে শুরু করেন পেয়ারার বাগান। বছর যেতে না যেতেই ফলনে ভরে যায় বাগান। আর আশানুরূপ দাম পেয়ে বদলে যায় তার ভাগ্য।

ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ছিট চিলারং গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে পারভেজ খান। জেলার সদর উপজেলার বুড়িবাঁধ এলাকায় সাড়ে চার একর জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে শুরু করেছেন বাগান। পেয়ারা, কুল, পেঁপে, আপেল, মাল্টা, ডালিম ও সবেদাসহ অনেক ফলের বাগানে চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় বাগান থেকে আয় হয়েছে কয়েক লক্ষাধিক টাকা। সৃষ্টি হয়েছে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান। তাকে দেখে বাগান করার উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক বেকার যুবক।  

বাগান দেখতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী আফরোজ আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে জানতে পারলাম এখানে একটি বড় বাগান হয়েছে৷ শোনার পর থেকে দেখার খুব আগ্রহ জন্মেছিল৷ তাই আজ সরাসরি আরেক বন্ধুসহ বাগানে আসছি৷ সত্যি কথা বলতে দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল৷ পেয়ারা আর বরই দেখে তো লোভ সামলাতে পারলাম না৷ আরও প্রচুর পরিমাণ ফল হয়েছে বাগানে, বেশ ভালো লাগলো।  

পারভেজের বন্ধু ইউসুফ আলী বলেন, আমি বাগানের শুরু থেকে তার সঙ্গে আছি। কয়েকটা গাছ দিয়ে সে তার বাগান শুরু করে। আমি তাকে নানা কথা বলতাম, কি দরকার বাগান করার৷ এতে কোনো লাভ হবে না। অযথা সময় নষ্ট করে ক্ষতি ডেকে আনিস না৷ ধীরে ধীরে এ ধারণা সে পাল্টে দেয় আমার৷ এখন সে বাগান করেই লাখ লাখ টাকা আয় করছে। তার বাগানের ফলন দেখে আমি নিজেই এখন বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠছি৷ তার কাছে আমি নানা পরামর্শ নিচ্ছি। চারার বিষয়েও কথা বলে রেখেছি৷ 

বাগানে কাজ করা শ্রমিক গুরুদাস বলেন, মুই শুরু থেকে বাগানডাত কাজ করেছু৷ গাছ দেখা-শোনা করা, স্প্রে করা, গাছ থেকে ফল পাড়া সব কাজ করি। এইঠে থেকে যে টাকাটা পাও সেইটা দিয়া মুই সংসারের খরচ চালাও। ক্ষেত বাড়িত দিন হাজিরার চাইতে এইঠে কষ্ট কম৷ মাঝেমধ্যে ফের পেয়ারা, বরইসহ ফলমূল খাওয়া যাচে। ফের বাড়িতও নিয়া যাচু সবার তাহানে (জন্যে)৷ 

বাগানে পেয়ারা কিনতে আসা রিফাত আহমেদ বলেন, আমি পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা থেকে এই বাগানে পেয়ারা নিতে এসেছি৷ নিজে গাছ থেকে পেরে নিতে পারব সেজন্য এখানে আসা৷ এখানে এসে খুব ভালো লাগলো৷ দেখে শুনে ফরমালিন মুক্ত পেয়ারা কিনতে পারলাম৷ সেই সঙ্গে বরই আর পেয়ারা তরতাজা খেতে পারলাম৷ মনটাও সবুজ বাগানের তৃপ্তি পেল৷ 

তরুণ উদ্যোক্তা ও বাগানের মালিক পারভেজ খান বলেন, আমি মূলত ইলেকট্রনিকের ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম৷ করোনার সময় যা একেবারে স্থবির হয়ে যায়। পরক্ষণে ভাবতে শুরু করলাম সবকিছু সমস্যা হলেও কৃষিখাত স্থবির হবে না৷ তখন থেকে বিভিন্ন জায়গার বাগানগুলো দেখার জন্য যেতাম৷ প্রথমে যদিও বিভিন্ন ফসল আবাদ করি৷ পরে পেয়ারা, বরই সহ আরও যে ফলগুলো রয়েছে সেগুলোর চারা রোপণ করি৷ আমার আশা ছিল কিভাবে ব্যবসার মত বার মাসে ফল পাওয়া যায় আর আয় করা যায়৷ সে কারণে মূলত ফলের বাগানে আসা৷ তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো ফলন আমি পেয়েছি৷ সেই সঙ্গে বরই ও সাথী ফসলের আয় দিয়ে বাগানের সব খরচ বহন করতে পেরেছি। সঙ্গে লক্ষাধিক টাকা আয়ও হয়েছে। পেয়ারায় ফলন বেশ ভালো এসেছে৷ যদি খুব কম দামও হয় তবুও ১৫-১৬ লাখ টাকা আয় করতে পারব ইনশাআল্লাহ। বাগান দেখাশোনা করাসহ আমার এখানে সাতজন শ্রমিক কাজ করে থাকেন৷ কখনো আবার সংখ্যাটা বাড়ে৷ আমার ব্যক্তিগত স্বপ্ন হলো বাগানটাকে আরও বড় করা। সেই সঙ্গে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে৷ আর কেউ যদি নতুন করে বাগান প্রজেক্ট শুরু করতে চায় সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আমি তার পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কর্মকর্তারা দুইবার এখানে এসেছিলেন তারা শুধু দেখে গেছেন৷ যদি তারা আমাকে পারিপার্শ্বিকভাবে সহযোগিতা করে তবে আমার বাগানকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে পারব।  

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, তার বাগানে অনেক ফলন এসেছে। তিনি কয়েক দফায় সেটি বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছেন। আমরা কয়েকবার গিয়েছি তার বাগানে৷ আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা পাশে থাকব৷ সেই সঙ্গে আরও নতুন কেউ আগ্রহী হলে আমরা সেসব উদ্যোগের পাশেও থাকব।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৩

আরএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।