ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অবৈধ দখলে অস্তিত্ব হারিয়েছে ডাকাতিয়া নদী

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩
অবৈধ দখলে অস্তিত্ব হারিয়েছে ডাকাতিয়া নদী

চাঁদপুর: অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া চাঁদপুরের মেঘনার শাখা নদী ডাকাতিয়া। আভ্যন্তরীণ বর্জ্য ও বর্ষায় পানির সঙ্গে ভেসে আসা মাটি (পলি) পড়ে চর জেগে অস্তিত্ব হারাচ্ছে।

 

নদীটি কুমিল্লা জেলার লাকসাম এবং চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে। ১৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীতে একসময় পাল তোলা নৌকায় পণ্য পরিবহন করা হত। দুই দশক আগেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকায় নৌযানে পণ্য ও কৃষি মালামাল পরিবহনে এই নদীটির ভূমিকা ছিল অনেক। কিন্তু এখন ইঞ্জিনচালিত নৌযান দিয়ে পণ্য পরিবহন হলেও নদীর বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে সমস্যা বেশি সৃষ্টি হয়। তবে নদীর চাঁদপুর অংশে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার জন্য তালিকা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

সরেজমিন দেখা গেছে, চাঁদপুর শহরের তিন নদীর মোহনা থেকে শুরু করে শহরের ইচলী, সদরের বাগাদী, মৈশাদী, শাহমাহমুদপুর, রামপুর, ফরিদগঞ্জের বালিথুবা, সুবিদপুর, হাজীগঞ্জ উপজেলা ও শাহরাস্তি উপজেলার বাজার কেন্দ্রিক ডাকাতিয়া নদীতে অবৈধ দখলদারদের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে এখন বালু ব্যবসায়ীরা নদীর অংশ দখল করে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

সদরের বালিয়া ও বাগাদী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ঢালীঘাট এলাকায় নদী দখল করে করা হয়েছে অবৈধ জাহাজ মেরামতের ডকইয়ার্ড এবং বেশ কয়েকটি বালু মহাল। আবার বাগাদী নিজগাছতলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর বাজার এলাকা, হাজীগঞ্জ বাজারের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বালু মহাল তৈরি করে নদী দখল করেছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। যার কারণে নদী সরু হয়ে নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।

সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রাজার বাজারের ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান ও সোলাইমান জানান, এক সময় চাঁদপুর থেকে আমাদের বাজার, শাহতলী বাজার, ছোট সুন্দর বাজার, কামরাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন হয়েছে নৌকায়। পরিবহন খরচও ছিল কম। এখন সড়ক পথে পরিবহন খরচ অনেক বেশি। ডাকাতিয়া নদী নাব্য হরিয়েছে এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকা আসতেও সমস্যা হয়। এ অবস্থায় নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

চাঁদপুর শহরের পুরাতন লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা আকবর ও আলম মিয়া জানান, লঞ্চঘাট থেকে ডাকাতিয়া নদী হয়ে ইচলী পর্যন্ত ঢাকা-চাঁদপুরের লঞ্চ চলাচল করতো। এখন আর লঞ্চ চলাচল করে না। নদীর দুই পাশ দখল হয়ে সরু হয়ে যাচ্ছে। দখল বন্ধ না হলে একসময় ডাকাতিয়া নদী শুধু কাগজে কলমেই থাকবে।

চাঁদপুর-রায়পুর সড়কের ‘চাঁদপুর সেতুর’ উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নদী দখল করে বড় আকারে তৈরি হয়েছে বালু মহাল। নদীর বেশ কিছু অংশ দখল করা হয়েছে এই স্থানে। ২০২১ ও ২০২২ সালে একাধিকবার তাদের বালু মহাল সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত নদী অবৈধ দখল করে স্থানীয়রা বালু ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম ডাকাতিয়া নদীতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বালু মহাল মালিকদের একাধিকবার তাদের বালু মহাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন। এছাড়াও ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার বালু মহালগুলোকে ভ্রাম্যমাণ আদালত আর্থিকভাবে জরিমানাও করেছেন। কিন্তু এখন বন্ধ হয়নি এসব নদী দখল করা বালু মহাল।

চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হান্নান বাংলানিউজকে বলেন, মূলত নদীতে কোনো প্রকার দূষণ হলে আমরা সে বিষয় নিয়ে কাজ করি। তবে আমাদের নিজস্ব পরীক্ষাগারের তথ্য হচ্ছে-ডাকাতিয়া নদীর পানি ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। এর কারণ হচ্ছে ডাকাতিয়া নদী পাড় এলাকায় বড় ধরনের কোনো কারখানা গড়ে ওঠেনি। তারপরেও আভ্যন্তরীণ বর্জ্য এই নদীতে গিয়েই পড়ে। কারণ জেলা সদর, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় অধিকাংশ খাল এই নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। বড় ধরনের দূষণের কোনো অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর কার্যালয়ের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ডাকাতিয়া নদী রক্ষায় তিন নদীর মোহনা থেকে শুরু করে শাহরাস্তি পর্যন্ত দুপাড়ে যেসব অবৈধ দখলদার রয়েছে, তাদের নাম তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এসব নাম তালিকা তৈরি হওয়ার পর মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে। পরে সমন্বয়ের মাধ্যমে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। আর যারা বিআইডব্লিউটিএর স্থানে ব্যবসা করবেন, তাদের সরকারকে রাজস্ব দিয়েই ব্যবসা করতে হবে।

নদী ড্রেজিং এর বিষয়ে তিনি বলেন, ডাকাতিয়া নদীর কয়েকটি অংশে ড্রেজিং করা হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে শহরের অংশে ড্রেজিং করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ড্রেজিং করবে আমাদের ড্রেজিং বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।