ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বরিশালে সাবেক মেম্বারের মা-ছেলেবউয়ের রহস্যজনক মৃত্যু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩
বরিশালে সাবেক মেম্বারের মা-ছেলেবউয়ের রহস্যজনক মৃত্যু

বরিশাল: বরিশালের বাবুগঞ্জের কেদারপুরে এক রাতে নাত বউ ও দাদী শাশুড়ির রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। সেইসঙ্গে মৃতদের স্বজন অপর এক নারীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে বাহেরচর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন- বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) দেলোয়ার হোসেনের মা লালমুন নেছা (১০২) এবং দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সোলায়ামানের স্ত্রী রিপা আক্তার (২০)।

এছাড়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারীর নাম মিনার বেগম (৫৫)।

স্বজন ও স্থানীয়রা বলছে, চুরি করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে এ তিন নারীকে কিছু খাওয়ানো হয়েছে।

তবে ঘটনাটিকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা পুলিশের। বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নিতে চুরির মতো একটি ঘটনার রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দুর্বৃত্তরা।  যদিও এ ঘটনায় জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়নি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাবুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অলিউল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে তিনি বলেন, খবর পেয়ে বুধবার রাত দুইটার আগে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ থেকে দেড়শত গজ দূরে ঘটনাস্থল। আমরা গিয়ে ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি। তিন নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। হাসপাতালে নেওয়ার পর লালমুন নেছা ও রিপা আক্তারকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আর মিনারা বেগম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বুধবার রাত ১১ টার দিকে প্রতিবেশী এক নারী শৌচাগারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। তখন তিনি বাড়ির মধ্যে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অবস্থান দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। তবে ওই ব্যক্তি কোনো উত্তর না দিলে ওই নারী ঘরের ভেতর থেকে টর্চলাইট আনতে যান। এসে ওই ব্যক্তিকে আর না পেয়ে নিজেদের গোয়াল ঘরের দিকে যান। সেখানে গিয়ে গরুসহ সবকিছু ঠিকভাবে দেখতে পান। পরে ঘরে ফেরার সময় সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে
ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ না আসায় তিনি ভয়ে ডাক চিৎকার দিলে আশপাশের বাড়ির লোকজনও সেখানে জড়ো হন। পরে  স্থানীয়রা মিলে ঘরের ভেতর গিয়ে তিন নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পুলিশে খবর দেয়।

এদিকে স্থানীয় গ্রাম পুলিশের দফাদার মো. হানিফ বাংলানিউজকে জানান, কেদারপূর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ভূতেরদিয়ায় এই ঘটনা পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সকাল থেকে বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা অবস্থান করেছেন। আশপাশের লোকজনও ভিড় করেছেন।  সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তার ছেলে বরিশালের একটি রাইস মিলে চাকুরি করেন। ফলে সেও বাড়িতে না থাকায় বাড়িটি পুরুষ শূন্যই ছিল।

তিনি বলেন, গেল রাতে এ বাড়িতে দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী, মা ও ছেলে বউ ছাড়া কেউ ছিলেন না। কেউ সন্দেহ করছে চুরির জন্য খাবারের সাথে কিছু মিশিয়ে এই পরিবারের তিনজনকে অচেতন করা হয়েছিল। আর সেই বিষক্রিয়া বেশি হওয়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সার্বিক আলামত দেখে চুরি নয়, হত্যাকাণ্ডের জন্যই এমনটা করা হয়েছে বলে সন্দেহ অনেকের।

তিনি বলেন, ঘরের এক পাশে একটি ছোট আকারের সিঁদ কাটা হয়েছে, তবে সেটি দিয়ে কোন মানুষের চলাচল সম্ভব নয়। আর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে যেটুকু জেনেছি তাতে কিছু স্বর্ণালংকারসহ অল্প কিছু মালামাল খোয়া গেছে। এক্ষেত্রে চুরি হলে আরও অনেক মালামালই তো খোয়া যেত।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পুরোপুরি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হয়েছে। বিষয়টি ভিন্ন খাতে রূপ দিতে চুরির ঘটনা সাজানো হয়েছে।  আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ওসি আরও বলেন, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।  

ঘটনার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সার্কেল এসপি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) ফরহাদ সরদার।

বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, জানুয়া‌রি ২৬, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।