ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শিক্ষক ছাড়াই চলে নার্সিং কলেজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
শিক্ষক ছাড়াই চলে নার্সিং কলেজ

মানিকগঞ্জ: জেলায় আকিহিতো মিচিকো নার্সিং কলেজে নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে, যা পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষক ছাড়া। পড়তে অবাক লাগলেও ঘটনা সত্য।

প্রতিষ্ঠানটিতে সেকশন শুরু হয়ে তিন বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সের জন্য মাত্র একজন প্রিন্সিপাল আছেন। এ ছাড়া আর কোনো স্থায়ী শিক্ষক নেই। অথচ ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সের শিক্ষা প্রদানে থাকার কথা অন্তত আরও ছয় জন শিক্ষক।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা গেছে, দিন প্রতি ২০০ টাকা পারিশ্রমিকে আকিহিতো মিচিকো নার্সিং কলেজে অতিথি হিসেবে শিক্ষকরা এসে পাঠদান করেন। প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল দেলোয়ারা আক্তারের দাবি, এভাবেই নাকি সারা দেশের প্রাইভেট নার্সিং কলেজগুলো চলে!

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত এবং বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কর্তৃক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান আকিহিতো মিচকো নার্সিং কলেজ। মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। সরকারিভাবে নিবন্ধিত হলেও কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজস্ব ব্যবসায়িক চিন্তা ধারায় কলেজটি পরিচালিত হচ্ছে।

৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সের জন্য সরকারিভাবে রয়েছে নির্ধারিত ফি। কিন্তু নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তার চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানে ল্যাব আছে সাতটি। কিন্তু সেখানে কোনো টেকনিশিয়ান নেই। তিনটি প্রশাসনিক রুমে বসে চলে দাপ্তরিক কাজ।

প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে যতজন শিক্ষার্থী রয়েছেন, তাদের অধ্যয়নের জন্য নার্সিং কলেজটিতে প্রয়োজন অন্তত ৬জন শিক্ষক। কিন্তু তাদের ‘সব কিছু একাই করেন’ প্রিন্সিপাল দেলোয়ারা আক্তার। এতে করে আকিহিতো মিচিকো নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করার মতো কেউ নেই। শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষায় ফেল হওয়ার ভয়ে কিছু বলতে পারেন না।

ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কলেজে প্রথমদিকে দুজন শিক্ষক ছিলেন। তারা মাস ছয়েক আমাদের ক্লাস নিয়েছিলেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বিএসসি ইন নার্সিং কমপ্লিটে আর কোনো শিক্ষক এ প্রতিষ্ঠানে জয়েন করেননি। বিএসসি ইন নার্সিংয়ের ইন্টার্র্নি শিক্ষার্থীদের দিয়ে আমাদের ক্লাস করানো হচ্ছে। আমরা কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমাদের ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান।

আরও এক শিক্ষার্থীর দাবি, তিন বছর মেয়াদি কোর্সে দে লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হলেও তারও বেশি অর্থ নেওয়া হচ্ছে তাদের কাছ থেকে। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন অজুহাতে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানের হর্তা-কর্তারা।

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করলেও আকিহিতো মিচিকো নার্সিং কলেজের প্রিন্সিপাল দেলোয়ারা আক্তার বিষয়টিকে খুব স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। তিনি বলেন, মূল ফি’র বাইরে কিছু অর্থ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে সত্য। তবে সেটি অল্প পরিমাণে।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কম, কীভাবে প্রতিষ্ঠানটি চালানো হচ্ছে, বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে শুধু আমিই নিয়োগপ্রাপ্ত। বাকিরা সবাই অতিথি শিক্ষক। দেশের সবগুলো নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থায় প্রায় একই।

তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই সরকারি নিয়মনীতির মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি চলুক। কিন্তু মালিক পক্ষের কারণে সব হয়ে ওঠে না।

এসব বিষয়ে কথা বলতে ফোন করা হয় আকিহিতো মিচিকো নার্সিং কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকিত হাসান। কিন্তু তিনি কথা বলতে রাজি হননি। দেখা করার চেষ্টা করা হলেও সেটি সম্ভব হয়নি।

আকিহিতো মিচিকো নার্সিং কলেজ নামে মানিকগঞ্জে যে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, তা নাকি জানেনই না জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, বিষয়গুলো সিভিল সার্জন দেখভালের বিষয়। তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তা ছাড়া এ নামে কোনো কলেজে আছে আমি জানি না।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী জানান, প্রতিষ্ঠানটি বা এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তার বিভাগের অধীনে নেই। পুরো বিষয়টি বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে পরিচালিত হয়। পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে সেখানকার ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) রাশিদা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে বাংলানিউজ। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।