ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বরগুনায় হত্যার হুমকি দিয়ে শিশুকে ধর্ষণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
বরগুনায় হত্যার হুমকি দিয়ে শিশুকে ধর্ষণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

বরগুনা: বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের কুলাইরচর গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে (১১) হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে (৪০)।  

নুরুল ইসলাম আমতলী পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দু গাজীর ছেলে।

তিনি কুলাইরচর গ্রামের রফিক হাওলাদারের মেয়েকে চতুর্থ বিয়ে করে সেখানে ঘরজামাই থাকেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, নির্যাতিতা মেয়েটির বাবা-মা আমতলী উপজেলার কুকুযা ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামের বিবিসি নামের একটি ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। মেয়েটি হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের নানা বাড়ি থেকে পড়াশুনা করে। এ বছর সে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার সকালে সে বাবা-মা এবং অসুস্থ ছোট ভাইকে দেখার জন্য ইট ভাটায় আসে। সারাদিন তাদের সঙ্গে কাটানোর পর রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিবেশী জামাই নুরুল ইসলামের (৪০) ভাড়ার মোটরসাইকেলে তুলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় সড়কের এক নির্জন স্থানে নামিয়ে চালক নুরুল ইসলাম মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।  

এসময় মেয়েটি তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে এবং বাধা দেয়। একপর্যায়ে নুরুল ইসলাম মেয়েটির মুখে তার গায়ের ওড়না ঢুকিয়ে দেয় এবং হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করে বাড়ির দরজার সামনে ফেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখান থেকে তুলে নিয়ে খুন করা হবে বলে শাসায়। ভয়ে ওই রাতে মেয়েটি এ ঘটনা কাউকে জানায়নি। পরের দিন বুধবার মেয়েটি তার শরীরের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ঘরে তার দাদিকে ঘটনা খুলে বলে। মেয়ের বাবা ধর্ষণের খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে বাড়ি এসে মেয়েকে নিয়ে আমতলী হাসপাতালে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।

আমতলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থা পরীক্ষার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনা জানাজানির পর ধর্ষক নুরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।

ভুক্তভোগী মেয়েটি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে, মোরে খারাপ কথা কওয়ার পর মুই চিৎকার দেওয়া ধরছি হেইআর পর মোর গার ওড়না খুইল্যা মুহে (মুখে) ঢুকাইয়া দেয়। আবার মোরে খুন কইর‌্যা হালাইবে এই রহম ভয় দেহাইয়া মোর সঙ্গে খারাপ কাম করে। মুই এইয়ার বিচার চাই।

মেয়েটির মা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, মোগো বাড়ির পাশের জামাই নুরুল ইসলাম। অরে বিশ্বাস কইর‌্যা ভাড়া টাহা দিয়া মাইয়াডারে বাড়ি পাডাইছি। হেইয়ার মধ্যে মোর মাইয়ার এরহম সর্বনাম হরছে। মুই অর ফাঁসি চাই।

মেয়েটির বাবা বলেন, মোরা স্বামী-স্ত্রী দিনমজুর ইটভাটায় কাম হইর‌্যা খাই। মাইয়াডা অর নানা বাড়ি থাইক্যা ফাইবে লেহাপড়া করে। অনেক দিন পর মাইয়াডায় আইছে মোগে দ্যাখতে। রাইতে মোগো পরিচিত বাড়ির পাশের জামাই নুরুই ইসলামের মোটরসাইকেলে বাড়ি পাডাই হেইয়ার মধ্যে মোগো এরহম সর্বনাশ করা অর ঠিক অয় নাই। মুই হেইআর কঠিন বিচার চাই।

কুলাইরচর গ্রামের বাসিন্দা মো. চুন্নু মাতুব্বর বলেন, ধর্ষক নুরুল ইসলাম একজন খারাপ প্রকৃতির লোক। প্রতারণা করে বিয়ে করা এবং খারাপ কাজ করাই তার নেশা। আমাদের প্রতিবেশী রফিক হাওলাদারের মেয়ে পারভীনকে চতুর্থ বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি ঘর জামাই থাকে। এর আগেও সে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করে তিনটি বিয়ে করেছে। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের খবর পেয়ে মেয়েটিকে হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।