ঢাকা, শনিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বগুড়ায় সাংবাদিকদের ওপর মদ্যপ যুবলীগ নেতার হামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩
বগুড়ায় সাংবাদিকদের ওপর মদ্যপ যুবলীগ নেতার হামলা

বগুড়া: বগুড়ায় আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের নিউজ করায় মাতাল অবস্থায় এক যুবলীগ নেতা দুই সাংবাদিককে মারধর করেছেন।

বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহরের টেম্পল রোডস্থ জেলা আওয়ামী লীগ অফিস সংলগ্ন টাউন ক্লাবে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

পরে বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) রাতে বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম নয়ন ও বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন’র (বিইউজে) সভাপতি আমজাদ হোসেন মিন্টু স্ব স্ব সংগঠনের পক্ষে এক যুক্ত বিবৃতিতে শিপুলের হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশসহ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে হামলাকারীকে অবিলম্বে গ্রেফতারসহ তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যুবলীগ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এছাড়া বিবৃতি দিয়েছেন সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়া’র (জেইউবি) সভাপতি মীর্জা সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক গনেশ দাস, বগুড়া ফটো জার্নালিস্ট 
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাফ উদ দৌলা ডিউক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদুর রহমান রানা ও সাধারণ সম্পাদক জি এম সজল।

হামলাকারী যুবলীগের ওই নেতার নাম শরিফুল ইসলাম শিপুল। তিনি বগুড়া জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি।

হামলা ও মারধরের শিকার দুই সাংবাদিক হলেন- বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কালের কন্ঠের বগুড়া প্রতিনিধি জেএম রউফ এবং স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক বগুড়ার সিনিয়র রিপোর্টার জহুরুল ইসলাম।

হামলার শিকার বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জেএম রউফ জানান, বুধবার রাতে তিনি টাউন ক্লাবের অফিসে (ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে) বসে উপ-নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ফলাফল প্রত্যাক্ষাণ করে সংবাদ সম্মেলনের নিউজ লিখছিলেন। সে সময় ওই কক্ষে ছিলেন দৈনিক কালবেলার বগুড়া ব্যুরো প্রধান প্রদীপ মহন্ত ও দৈনিক বগুড়ার জহুরুল ইসলাম ও তার আরও দুই বন্ধু। রাত সাড়ে ১১টার দিকে যুবলীগ নেতা শিপুল মদ্যপ অবস্থায় সেখানে প্রবেশ করেন। তিনি (রউফ) হিরো আলমের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও তার পত্রিকার মেইলে দিয়েছেন মর্মে ফোনে অফিসকে অবহিত করছিলেন। এটি শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে অশালীন ভাষায় গালাগাল শুরু করেন শিপুল ৷ সেই সঙ্গে 'সাংবাদিকরা হিরো আলমকে রাজনীতিক বানাচ্ছে' এমন অভিযোগ তুলে হামলা চালিয়ে মারধর করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার একপর্যায়ে টাউন ক্লাবে উপস্থিত অন্যরা রউফকে উদ্ধার এবং শিপুলকে ওই অফিস থেকে বের করে দেন। তার ৫ মিনিটের মধ্যে শিপুল আবারও সেখানে প্রবেশ করে সাংবাদিক জহুরুলের ওপর হামলা করেন। তিনি জহুরুলের গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা চালান। সে সময় তাদের চিৎকারে টাউন ক্লাবের কর্মচারিরাসহ বাইরের কয়েকজন লোক গিয়ে শিপুলকে সেখান থেকে সরান।

এর আগে, উপ-নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বুধবার রাত ৯টার দিকে সাতমাথায় লাইভ করেন একজন সংবাদকর্মী। এ সময় শিপুল তাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। শিপুল মদ্যপ থাকায় নিজের সম্মান রক্ষার্থে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন ওই সংবাদকর্মী।

এছাড়া গত দুই দিন আগে অন্য আরেক সংবাদকর্মীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন শিপুল। হিরো আলমকে নিয়ে টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার করায় শিপুল ক্ষুদ্ধ হয়ে তার সঙ্গে এমন আচরন করেন।

এদিকে গতকাল রাতে ঘটনার পর থেকে শিপুল আত্মগোপন যান। পুলিশ রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেও তাকে ধরতে পারেনি।  

বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশিষ পোদ্দার লিটন বলেন, দুঃখজনক এ ঘটনার জন্য আমরা লজ্জিত। শিপুলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা ও ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে জানান। পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, শিপুলকে ধরতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৩
কেইউএ/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।