ঢাকা: জাতিসংঘ মহাসচিবের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) দূত বেলজিয়ামের রানি মাথিলদা তার তিন দিনের বাংলাদেশ সফরের শেষ দিনে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ খুলনা জেলা পরিদর্শন করেছেন। এর মধ্যদিয়েই তার বাংলাদেশ সফর সমাপ্ত হলো।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সফরকালে তিনি জলবায়ু বিষয়ক কর্মসূচি, জেন্ডার সমতা, শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পণ্যের দায়িত্বশীল ব্যবহার ও উৎপাদন, গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং অন্যান্য বিষয়সহ কতগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক জাতিসংঘের কর্মসূচিভিত্তিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
বেলজিয়ামের রানির এই সফর দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
এই সফরটি কোভিড-১৯ মহামারীর পরবর্তী সময়, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপট এবং ভয়াবহ বন্যাসহ (যেটা গত বছরের জুনে আঘাত হেনেছিল) এদেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলোকে অভিঘাত সহনশীল হতে এবং কাউকে পিছিয়ে না রাখার ক্ষেত্রে এসডিজির গুরুত্বের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস এক বিবৃতিতে রানির সফরের প্রশংসা করে বলেন, এসডিজির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার ওপর পুনরায় আলোকপাত করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ এবং আমাদের অংশীদারগণ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে কোনো প্রচেষ্টাই বাদ দেবে না।
রানি মাথিলদা নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তার সফর শুরু করেন। যেখানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) নারী শ্রমিকদের নিয়ে জেন্ডার সমতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। পরবর্তীতে তিনি জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সহায়তায় ঢাকায় একটি সামর্থ্য ভিত্তিক দ্রুত শিখন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন, যা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করছে।
বাংলাদেশে তার তিন দিনব্যাপী সফরের শেষ দিনে বেলজিয়ামের রানি খুলনার দাকোপের সুতারখালি ইউনিয়ন এলাকায় পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত একটি প্রকল্প এলাকায় যান। এলাকাটি ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত এবং লবণাক্ততা অনুপ্রবেশের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে তিনি স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ওই এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখতে পান।
সুতারখালি ইউনিয়নে স্থাপিত পানি পরিশোধন প্ল্যান্টটি ওই এলাকায় বসবাসরত ৪০০ পরিবারের ১৬০০ লোকের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং জাতিসংঘ মূলধন উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনসিডিএফ) সহায়তায় প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক স্থানীয় সরকার উদ্যোগে ২০২০ সালে উদ্বোধন করা হয়।
রানি মাথিলদা সুতারখালি ইউনিয়নের স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তারপর তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখার জন্য নৌকাযোগে ঝুলন্ত পাড়ায় যান। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ওঠার সংগ্রামরত স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন।
সুতারখালি ও শিবসা নদী এলাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত ঝুলন্ত পাড়া প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান হারে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে।
রানি তার এই সফরে কক্সবাজার জেলাও সফর করেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য চলমান মানবিক সাড়াপ্রদান কার্যক্রম দেখেন। তিনি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও তরুণ এবং শরণার্থী ক্যাম্পে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন।
এছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘের অন্যান্য শরণার্থী সংস্থা ও এর অংশীদার কতৃর্ক আয়োজিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাগুলোও পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, বেলজিয়ামের রানি মাথিলদা গত ৬ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বেলজিয়ামের রানিকে স্বাগত জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩
টিআর/এনএস