ঢাকা: গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষা এবং অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় শ্রম আইনে তাদের স্বীকৃতি প্রদানসহ ৮ দফা সুপারিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) শোভনকাজ ও কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশের নারী গৃহশ্রমিকদের ওপর পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এসব সুপারিশ দেয় সংস্থাটি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নানা কারণে গৃহশ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের আয়ের তুলনায় ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ। তার ওপর আবার ঠুনকো কারণে মজুরি কর্তনের ঘটনাও ঘটনা ঘটছে অহরহ। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ সম্পর্কে গৃহকর্মী ও মালিকেদর ধারণা না থাকা এর অন্যতম বড় কারণ। তাছাড়া শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নেও নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
তাই গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফা সুপারিশ দিয়েছে বিলস।
সুপারিশগুলো হলো-
১.শ্রম আইনে গৃহশ্রমিককে স্বীকৃতি প্রদান
২. গৃহশ্রমিকের নিবন্ধন
৩. কর্মক্ষেত্রে শোভন কাজ নিশ্চিতকরণ
৪. থানাগুলোতে গৃহশ্রমিকদের জন্য পৃথক কোনো অভিযোগ ব্যাবস্থাপনা বিভাগ তৈরি
৫. আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে গৃহশ্রমিকের অধিকার ও তা লঙ্ঘনের প্রতিকার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা
৬. তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তনে ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ
৭. জীবন দক্ষতা ও কর্মদক্ষতা প্রশিক্ষণ
৮. গৃহকর্মীদের প্রতি শিষ্টাচার শিশুদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা
অনুষ্ঠানে শোভনকাজ ও কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশের নারী গৃহশ্রমিকদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডিনেটের নির্বাহী পরিচালক এম. শাহাদাৎ হোসেন।
বিলস জানায়, গৃহশ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা ও সুরক্ষায় 'সিকিউরিং রাইটস অব উইমেন ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স ইন বাংলাদেশ (সুনীতি)' শীর্ষক এক প্রকল্পের আওতায় এই গবেষণা করা হয়। গ্লোবাল এফেয়ার্স কানাডা ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই গবেষণাটি পরিচালনা করে বিলস।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্য, পেশার সহজলভ্যতা এবং বিয়ে বিচ্ছেদসহ বিভিন্ন কারণে নারীরা গৃহকর্মীর কাজ বেছে নেন। কিন্তু এ পেশায় এসে ৪২ শতাংশ আবাসিক গৃহকর্মী বসার ঘর অথবা রান্না ঘরের মতো খোলা জায়গায় ঘুমান। ৭৫ শতাংশ অনাবাসিক অথবা খণ্ডকালীন গৃহকর্মী বস্তিতে বাস করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গৃহকর্মীদের গড় মাসিক আয় ৫ হাজার ৩১১ টাকা। কিন্তু তাদের মাসিক গড় ব্যয় ১০ হাজার ৮০১ টাকা। এক্ষেত্রে ৯৬ শতাংশ গৃহকর্মী বলছেন, বর্তমান মজুরি মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। এছাড়া শতভাগ গৃহকর্মীই কাজ করেন মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে।
বিলস তাদের প্রতিবেদনে আরো জানায়, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি বা বিলম্বের কারণে মজুরি কর্তনের শিকার হন ২৬ শতাংশ গৃহকর্মী। আবাসিক গৃহকর্মীরা দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন। অনাবাসিক বা খন্ডকালীন গৃহকর্মীদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পান না। এছাড়া ৯৯ শতাংশ গৃহকর্মীই পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে কোনো প্রশিক্ষণ পান না। মাত্র ৪ শতাংশ গৃহকর্মী কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৯৯ শতাংশ গৃহকর্মী ও ৬৬ শতাংশ নিয়োগকর্তার গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি- ২০১৫ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। যার কারণে বাসা বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে মানসিক নির্যাতনের সম্মুখিন হন ৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী। লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার বিষয়ে সাহায্য চাওয়ার যেসব উপায় রয়েছে, যেমন- হটলাইন, হেল্পলাইন সম্পর্কে সচেতন নয় ৯১ শতাংশ গৃহকর্মী।
করোনা মহামারির সময়ে গৃহকর্মীদের ওপর লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ সময় ২ শতাংশ গৃহকর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন এবং ২ শতাংশ গৃহকর্মী আয়ের উৎস হারিয়ে স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানানো হয়।
বিলসের যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী পরিষদের সম্পাদক শাকিল আক্তার চৌধুরীর সঞ্চালনায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বেল্লাল হোসেন শেখ, বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শক ও অতিরিক্ত সচিব (অব.) এবিএম খোরশেদ আলম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক সুষ্মিতা পাইক, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোয়ালিটি স্পেশালিস্ট মুরাদ পারভেজ, লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার অ্যাডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম ও বিলস উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
এসসি/জেএইচ