ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ক্রেতা সেজে গাউছিয়া-নিউ মার্কেটে ঘোরে ইভটিজাররা!

জুনায়েদ আহমেদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩
ক্রেতা সেজে গাউছিয়া-নিউ মার্কেটে ঘোরে ইভটিজাররা!

ঢাকা: দেশে লুট খুন অপহরণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইভটিজিং ও ধর্ষণ। প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললে ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রাণির ঘটনা আমাদের চোখে পড়েই।

দিনে দিনে এ দেশ যেন ইভটিজার-ধর্ষকদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে। এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারও!

নারীরা বেশিভাগ সময় ইভটিজিংয়ের শিকার হন জনবহুল এলাকায় অথ্যাৎ শপিংমলে। বাসেও নারীরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। অনেক নারীরাই এজন্য পাবলিক বাস এড়িয়ে চলেন।

ঢাকার গাউসিয়া-নিউ মার্কেট এলাকায় ইভটিজারদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। এ মার্কেট এলাকায় রয়েছে কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারী ও নেশাখোরদের চক্র। মার্কেটের আশপাশেই তাদের বিচরণ। সুযোগ বুঝে তারা চুরি-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি নারীদের হয়রানি করাও বাদ রাখে না। ক্রেতা সেজে মার্কেটে ভিড়ের ভেতরে ঢুকে ইচ্ছাকৃতভাবে নারীদের নানাভাবে বিরক্ত করে তারা। এমনটাই অভিযোগ অনেকের।

সরেজমিনে নিউ মার্কেটে এলাকার নানা শপিংমল ঘুরে নারী-পুরুষের বেশ ভিড় দেখা যায়। এরমধ্যে কেউ কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত। আবার কেউ এমনিতেই ঘোরাঘুরি করছে।

মার্কেট এলাকায় কথা হয় আফরিন নামে শপিং করতে আসা এক তরুণীর সঙ্গে, তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কমদামে পণ্য পাওয়া যায় বলে প্রায়ই এ মার্কেটে আসি। অনেক সময়ই বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। ভিড়ের ভেতরে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কাধাক্কি করে। প্রতিবাদ করলে উল্টাপাল্টা কথা বলে চলে যায়। বেশি ঝামেলা হয় ঈদের সময়। কারণ তখন তুলনামূলকভাবে ভিড় বেশি থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক তরুণী বাংলানিউজকে বলেন, এ মার্কেট এলাকায় নিরাপত্তা নেই। যে যার মতো চলছে। সেদিন ভিড়ের ভেতর একজন আমার গায়ে হাত দিয়েছিল। আমি সজোরে থাপ্পড় দিলে সে চলে যায়। কিন্তু অনেকে আছেন কিছু বলেন না। তাই এ জাতীয় লোকেরা (বখাটে) আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

অনেকে অভিযোগ করে বলেন, মার্কেটের দোকানদার ও সেলসম্যানরাও বেপরোয়া। কোনো তরুণী বা ক্রেতা পণ্য কিনতে ঢুকে যদি পছন্দ না হলে বেরিয়ে আসেন তাহলে সেলসম্যানরা পেছন থেকে গালাগালি করেন। নারীদের নানা কটু কথা বলেন।

মধ্যবয়স্ক এক নারী জানান, তিনি তার ছেলেকে নিয়ে শপিং করতে এসেছিলেন। ঘুরে ঘুরে জামা- কাপড় দেখছিলেন। এক দোকানে ঢুকলে দামে বনিবনা না হওয়ায় তিনি বেরিয়ে আসছিলেন। এ সময় দোকানের ভেতর থেকে তাকে নিয়ে নানা বাজে মন্তব্য করা হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বকুল নামে নিউ-মার্কেটের এক দোকানি বাংলানিউজকে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটে না। আমরা দোকানদাররা সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি।

গাউছিয়ার বয়স্ক এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ মার্কেটে অনেক বছর ধরে ব্যবসা করি। এখানে নারীদের যে হয়রানি করা হয় না, তা সত্য নয়। অনেক সময় বিভিন্ন বসয়ী নারীরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। তবে এসব বাইরে থেকে আসা লোকজন করে। মার্কেটের লোকজন এতে জড়িত নয়।

তিনি আরও বলেন, এ এলাকা মাদকসেবীদের আখড়া। তারা ইভটিজিং, চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। কিন্তু কিছু হলেই নাম হয় ব্যবসায়ীদের।

এসব বিষয়ে নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল গনি সাবুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে মার্কেটে নারী হয়রানির বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসে না। আসলে তো অবশ্যই আমরা পদক্ষেপ নেবো।

মার্কেট এলাকায় আপনাদের টিম কাজ করে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্কেট এলাকার প্রত্যেক পয়েন্টে আমাদের টিম সতর্কতার সঙ্গে কাজ করে। যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।