বগুড়া: রেলওয়ের জায়গা দখল করে বাড়ি ও মার্কেট নির্মাণ করেছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা। রেলওয়ে তাদের অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করে তালিকাভুক্ত করলেও দখল উচ্ছেদ করতে পারেনি গত কয়েক বছরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুড়া রেলস্টেশনের আশপাশে কামারগাড়ি, হাড্ডি পট্টি, পুরান বগুড়া, জামিলনগর এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজের নতুন ভবনের আশেপাশে রেলওয়ের এসব জায়গার অবস্থান।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসলাম আলী ও একই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মাহমুদুন্নবী রাসেল আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রেলওয়ের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করে অন্যের কাছে পজিশন বিক্রি করে দেন। আবার কোনো দোকান ভাড়া দেন। এভাবে সরকারি আজিজুল হক কলেজের আশপাশে রেলওয়ের বাণিজ্যিক জায়গাগুলো বেদখল হয়ে যায়।
বছরখানেক আগে রেলওয়ের পক্ষ থেকে ৪০ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা তৈরি করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, মাহমুদুন্নবী রাসেল কামারগাড়ি এলাকায় ৬২৫ স্কয়ার ফুট জায়গা দখল করে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কামারগাড়ি এলাকায় আজিজুল হক কলেজের প্রবেশ গেটে দখল করা জায়গায় আটটি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন মাহমুদুন্নবী রাসেল। তবে রাসেলের দাবি, সেখানে কিছু জায়গা তার নামে লিজ নেওয়া ছিল। কিছু জটিলতা থাকায় তার কাছ থেকে রেলওয়ে খাজনা নেওয়া বন্ধ করে তাকে অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কামারগাড়ি এলাকায় রেলওয়ের জায়গায় ৯৫০ স্কয়ার ফুট জায়গায় সেমিপাকা বাড়ি নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আসলাম। তার নামও রেলওয়ের অবৈধ দখলদারের তালিকায় রয়েছে।
রেলওয়ে বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আমাদের চোখের সামনেই এসব দখল করা হলেও কোনো বাধা দেওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, ছাত্রলীগের এই দুই নেতার নেতৃত্বে দখল করা রেলওয়ের জায়গাগুলোতে দোকানঘর নির্মাণ করে অন্যদের কাছে পজিশন বিক্রি করে দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ছাত্রলীগের এই দুই সাবেক নেতার নামে একাধিক মামলা হয়। তারা আত্মগোপনে চলে গেলেও তাদের নিয়োজিত লোকজন অবৈধ দখল করা জায়গায় নির্মাণ করা দোকান, মার্কেট দেখাশোনা করছেন।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুন্নবী রাসেল আত্মগোপনে থেকে মোবাইল ফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করেননি। যে মার্কেটটি অবৈধ দখল দেখানো হচ্ছে তার কিছু অংশ লিজ নেওয়া আছে। কিন্তু জটিলতার কারণে রেলওয়ে খাজনা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ছাত্রলীগের আরেক সাবেক নেতা আসলাম আলীও আত্মগোপনে রয়েছেন। তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে বিভাগের বগুড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিল্ড কানুনগো গোলাম নবী বলেন, আমরা সরেজমিনে গিয়ে দোকানে যার অবস্থান পেয়েছি তাকেই অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করে তালিকা করেছি। সেই হিসেবে ৪০ জনের কাছে রেলওয়ের ১১ হাজার ৫১৫ স্কয়ার ফুট জায়গা বেদখল হয়ে আছে। তবে দোকান ঘরের বাহিরেও জায়গা রয়েছে। সেই হিসাবে দখলের পরিমাণ আরও বেশি হবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আগে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা যায়নি। আর এখনও জনবল কম থাকায় অবৈধ দখল উচ্ছেদে দেরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
জিডি/এমজে