ঢাকা: রাশিয়ার জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার ঘটনায় দুদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।
তিনি বলেন, দুদেশের বোঝাপড়া এতটাই ভালো আমরা মনে করি না যে, জাহাজের একটি বিষয় নিয়ে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সেক্ষেত্রে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক সেহেলী সাবরীন বলেন, নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিবেচনায় রেখে ঢাকাকে পদক্ষেপ গ্রহণের বার্তা দিয়েছে মস্কো। আমাদের রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, আমরা রিপোর্টটি পেয়েছি। ওখানে রাশিয়ার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট করে কোনো জাহাজের কথা বলা হয়নি। নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ৬৯টি জাহাজকে কেন বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হবে না সে সম্পর্কে তারা তাদের উদ্বেগ জানিয়েছে।
তিনি বলেন, রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানান। তিনি এ ঘটনায় রাশিয়ার উদ্বেগের বিষয়টি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রদূত রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার সরকারি নির্দশনার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। আমাদের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন কেন জাহাজকে ভিড়তে দেওয়া হয়নি, সে প্রসঙ্গে বলেছেন।
বাংলাদেশি দূতকে ডেকে যে বার্তা দিয়েছে মস্কো, সেটি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বার্তার বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা পরে গণমাধ্যমকে জানানো কথা বলেন মুখপাত্র।
সেহেলী সাবরীন বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভূমিকা আছে। জাতিসংঘে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গৃহীত প্রস্তাবে আমাদের পক্ষে রাশিয়ার সমর্থন ছিল। সেটা একবার না দুই দুবার ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়েও বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি তখনও কিন্তু গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে বাংলাদেশ-রাশিয়া একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাহাজ সম্পর্কিত সমস্যাটি ছয় সপ্তাহের আগে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি। সুতরাং আমরা মনে করি, আমাদের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কোনো রিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
বাংলাদেশে ভিড়তে না পেরে রাশিয়ার জাহাজ অন্য দেশেও ভিড়তে না পারার প্রসঙ্গ টানেন মুখপাত্র সেহেলী। তিনি বলেন, যে জাহাজটিতে মালামাল আসতে পারেনি, সেটি কিন্তু শুধু বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে পারেনি তা নয়। সেটি তারা অন্য গন্তব্যে আরও অনেক দেশে ভিড়াতে চেয়েছিল কিন্তু তারা সেটা পারেনি। সুতরাং এটা শুধু আমাদের ক্ষেত্রে নয়।
রাশিয়ার জাহাজগুলোর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক নয়; যুক্তরাষ্ট্রের। সুতরাং বাংলাদেশ কেন এটি মানছে এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, অন্যন্যা রাষ্ট্রগুলো কিন্তু এ পদক্ষেপ নিয়েছে। উরসা মেজরের পর আরও রাশিয়ার জাহাজ কিন্তু বাংলাদেশে এসেছে। তবে সেগুলো নিষেধাজ্ঞা বর্হিভূত জাহাজ।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
টিআর/আরবি