ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হারিয়ে যাচ্ছে বিয়ের গীত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
হারিয়ে যাচ্ছে বিয়ের গীত

নীলফামারী: বিয়ে হবে আর গীত হবে না-এমনটি এক সময় ভাবাই যেত না নীলফামারীতে। জেলায় সর্বত্র ছিল এই প্রচলিত রীতি।

 

গায়ে হলুদের পর্ব থেকে শুরু হতো এই গীত। গানে গানে বিয়ে বাড়ি হয়ে উঠত আনন্দময়। কিন্তু সেই আনন্দ এখন আর চোখে পড়ে না।  

গান হয় তবে প্রচলিত গীতের স্থান দখল করেছে স্পিকারে বাজানো ঝাকানাকা বাংলা-হিন্দি গান।  

নীলফামারীতে বিয়ের গীতগুলো গ্রামের বয়োবৃদ্ধরা বংশনুক্রমে গেয়ে আনন্দ করে আসছেন। তাৎক্ষণিক রচিত গানগুলি লোকসংস্কৃতির এক অমূল্য ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।  

মেয়েকে বিদায় দেওয়া পর্যন্ত মেয়ের বাড়িতে গীত চলে। পাত্রের বাড়িতে গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে পরের দিন বৌভাত পর্যন্ত চলে গীত।  

নববধূকে শ্বশুরালয়ে নিয়ে আসার পরের দিন ছেলে, মেয়ে, বৃদ্ধ, নারীসহ অনেকে বিয়ের গীত ও রং-মাখা, কালি-মাখাসহ নাচ-গান করে আনন্দে মেতে ওঠেন।  

তবে এসব গ্রামীণ ঐতিহ্য ও এক সময়কার জনপ্রিয় বিয়ের গীত এখন বিলুপ্তির পথে।

কারণ, বর্তমান প্রজম্ম এসব গীতে খুব একটা আগ্রহী নয়। তারা আধুনিক পাশ্চাত্য ঢংয়ের দেশি-বিদেশি গানে অভ্যস্ত। ফলে গ্রামীণ জনপদের বিয়ের গীত ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুরের শতবছরের বৃদ্ধ নজির হোসেন বলেন, আধুনিকতার কারণে গ্রামের বিয়ের গীত গাওয়ার প্রথাটা প্রায় উঠে যাচ্ছে। একসময় এই গীত ছাড়া গ্রামে বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। পরবর্তীতে হিজড়ারা নিজেদের ঢংয়ে এসব গীত গাইতে থাকেন। বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে মানুষ এখন গ্রামীণ প্রচলনকে ভুলে যাচ্ছে, ভুলে যাচ্ছে গ্রামীণ শেকড়। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের বিয়ের গীত।  

তবে নীলফামারী জেলার কিছু এলাকায় এখনও বিয়ের গীত ও বর কনে খেলার প্রচলন রয়েছে।

গ্রামের এক বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা গেল, কনেকে বসিয়ে রেখে পুরুষ সেজে নাচ করছেন নারীরা। গীতের মাধ্যমে বর-কনের কথা বলছেন। ভাবি-ননদের নানা কথা বলছেন। নিজেদের ছন্দ ও সুরে এসব গীত চলছে। কয়েক জায়গায় দেখা গেছে বিয়েবাড়ির নারীরা গীত ঠিকমতো করতে না পারেন না। তারা পুরুষ গীদালি (যে গীত গায়) ভাড়া করে আনেন।

সদরের সংগলশী ইউনিয়নের সবুরন নেছা বলেন, এক সময় গ্রামে বিয়ের আগের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত গীত গাইত নারীরা। এখন এসব বিয়ের গীত ও রং খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। সমাজে পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন বিয়ের অনুষ্ঠান ভিডিও ধারণ করে রাখেন।  গীত বাজানোর কাজ এখন যন্ত্রের, সাউন্ড সিস্টেমের।

সৈয়দপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও কথাসাহিত্যিক হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের সমাজে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিয়ের গীত কি জিনিস এই সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকবে না। তারা শুধু বাবা, মা, দাদা, দাদীর কাছে গল্প শুনে জানবে বিয়ের গীতের কথা। নীলফামারীর এসব ঐতিহ্য নিয়ে আমি বই প্রকাশ করেছি, যা নতুন প্রজম্মের কাজে লাগবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।