ঢাকা, সোমবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জাবির ‘নিপীড়ক’ শিক্ষক জনির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ জানতে চায় ইউজিসি

জাবি করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
জাবির ‘নিপীড়ক’ শিক্ষক জনির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ জানতে চায় ইউজিসি জাবি পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, (জাবি): যৌন নিপীড়নের দায় ওঠা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সে লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।

আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে এ ব্যাপারে ইউজিসিকে জানাতে চিঠিতে বলা হয়েছে।

গত বুধবার (১ মার্চ) ইউজিসির পক্ষ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ জাবির রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কানিজ বরাবর চিঠিটি পাঠান।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও জাতীয় দৈনিক থেকে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি বিভাগের একাধিক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, ভুক্তভোগী ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং জোর করে দায় মুক্তিপত্র আদায় করেছেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা কমিশনকে চিঠি পাওয়ার পর সাত কার্যদিবসের মধ্যে পত্রযোগে ও ই-মেইলে জানাতে অনুরোধ করা হলো।

শুক্রবার চিঠি পাঠানোর ব্যাপারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ বলেন, ওই শিক্ষকের ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কি ব্যবস্থা নিয়েছে আমরা সেটা জানতে চেয়েছি। এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। চিঠি এলে তারপর আমরা বিবেচনা করবো।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনি ২০১২ সালে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক নারীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ।

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে একই ডিপার্টমেন্টের ৪২তম ব্যাচের ছাত্রী ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এক নারী শিক্ষকের সঙ্গে অফিসকক্ষে তোলা তার অন্তরঙ্গ একটি সেলফি ফাঁস হয়। পরে ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দেয়ালে পোস্টারিং করা হয়। পরে জনির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ জানায়। পরে জনির বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। নানা টালবাহানার পর গত ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের দাবি করলেও সিন্ডিকেটের আলোচ্য সূচিতে ছিল না প্রতিবেদন বিবেচনার কোনো কথা।

এছাড়া, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের আরকে সাবেক ছাত্রী বলেন, শিক্ষক বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে তাকে কু-প্রস্তাব দিয়েছিলেন জনি। তিনি সেটি প্রত্যাখ্যান করলে যোগ্যতা ও পদ খালি থাকার পরও তাকে শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয়নি। যাকে নেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে জনির অন্তরঙ্গ ছবি ফাঁস হয়েছে। কিন্তু ওই নারীর চেয়েও যোগ্য প্রার্থী ছিল।

চলতি বছর জানুয়ারিতেও একই বিভাগের ৪৩ ব্যাচের আরেক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জনির পক্ষে ‘দায়মুক্তি’ পত্র লেখানোর অভিযোগ ওঠে।

পরে গত ৮ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, সিন্ডিকেট সভা ঘেরাও’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি অভিযোগের ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

এতে বলা হয়, ঐতিহ্যবাহী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপীড়নের অভিযোগের ঘটনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এই ঘটনায় একদিকে যেমন যৌন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপীড়নের অভিযোগের ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

বুধবার যে চিঠি দেওয়া হয় সে ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জেবউননেছা বলেন, আমি এরমকম কোনো চিঠির ব্যাপারে জানি না। এই প্রথম (সাংবাদিকের কাছে) জানলাম।

এ বিষয়ে জানতে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমকে একাধিবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।