ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সৌদি গিয়ে বাংলাদেশির মৃত্যু, লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
সৌদি গিয়ে বাংলাদেশির মৃত্যু, লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা  

ময়মনসিংহ: পরিবার নিয়ে সুখে থাকার আশায় শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরবের জেদ্দায় গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তফাজ্জল হোসেন (৪২) নামে এক বাংলাদেশি। এ ঘটনার পর তিনদিন পেরিয়ে গেলেও তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

 

এ নিয়ে এই প্রবাসীর পরিবার ও স্বজনদের মাঝে আহাজারি চলছে। এ অবস্থায় এই প্রবাসী শ্রমিকের লাশ দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন শোকাহত পরিবারের সদস্যরা।    
 
রোববার (১২ মার্চ) দুপুর ২টায় মৃত তফাজ্জল হোসেনের ছোট ভাই মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত শুক্রবার (১০ মার্চ) বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় সৌদি আরবের জেদ্দা শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই রেমিটেন্স যোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন বলে জানান তিনি।     

তফাজ্জল হোসেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের ভোলার আলগী গ্রামের আসীম সরকার বাড়ীর মো. আশ্রাফ আলীর ছেলে।  

দেশে তার স্ত্রীসহ দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে বড় ছেলে সারোয়ার হোসেন (১৩) স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ছোট ছেলের বয়স পাঁচ বছর।  

তফাজ্জলের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আরও জানান, বাবা নিম্নবিত্ত কৃষক। মা-বাবা, চার ভাই ও দুই বোন নিয়ে আট সদস্যের সংসারে অভাব আমাদের নিত্যসঙ্গী। এ কারণেই পরিবারের সুখের সন্ধানে এর আগেও আমার ভাই (তফাজ্জল হোসেন) মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ভিসায় ৯ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন। এরপর তার উপার্জনের টাকায় ভালোই চলছিল জীবন।     

কিন্তু বিগত বছর দুই আগে হঠাৎ প্রায় ছয় লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন ভাই। এতে তার মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়লে ১৭ মাস আগে আবারও সুখের আশায় শ্রমিক ভিসা নিয়ে তিনি সৌদি আরব যান। সেখানে দালালদের কথা মতো ভালো কাজ না পাওয়ায় কষ্টে কাটছিল তার দিন। এতে তিনি আরও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তবে কিছুদিন আগে অনেক প্রচেষ্টায় সেখানকার ‘ইছম’ নামক একটি কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ পান।     

কিন্তু প্রতিনিয়ত পরিবার ও ঋণের চিন্তায় তার এই সুখ স্থায়ী হয়নি। ১৮ দিন আগে হঠাৎ তফাজ্জল হোসেন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়লে সহকর্মীরা তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। তখন খবর আসে তফাজ্জল মারা গেছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সেদিন বেঁচে গেলেও সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষতক তার মৃত্যু হয়।    

ছেলের লাশের অপেক্ষায় কেঁদে কেঁদে জ্ঞান হারাচ্ছেন মা উম্মে কুলসুম ও বাবা আশ্রাফ আলী। তাঁরা চান ছেলের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা।    

এ বিষয়ে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফৌজিয়া নাজমিন।  

তিনি বলেন, এ ঘটনার খবর আমার জানা নেই। এখনই খোঁজ নেওয়া হবে। তবে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।   

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।