ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আজ বিশ্ব পানি দিবস: বাড়ছে বিশুদ্ধ পানির সংকট

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
আজ বিশ্ব পানি দিবস: বাড়ছে বিশুদ্ধ পানির সংকট

গাজীপুর: শিল্প কারখানার দূষিত তরলবর্জ্য, পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্যে খাল-বিল ও নদী-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ের পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকে নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট বাড়ছে।

গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে শত শত শিল্প কারখানা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও ‌কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের গ্রাম বাংলার সে সৌন্দর্য। শিল্প কারখানার দূষিত তরলবর্জ্য, পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্যে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার নদী-নালা ও খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ের পানি বিপজ্জনকভাবে দূষিত হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক জলাশয়ের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব দূষিত তরল বর্জ্যের কারণে বিষাক্ত হয়ে গেছে জলাশয়গুলো।

দূষিত ও বিষাক্ত হওয়ায় এসব জলাশয়ে জলজপ্রাণি আজ বিলুপ্তির পথে। দূষণের কারণে গাজীপুরে তুরাগ নদ, বালু নদী ও চিলাই নদী ছাড়াও খাল-বিল ও নালাসহ বিভিন্ন জলাশয়গুলো অস্তিত্ব সংকটে। এদিকে অতিরিক্ত মাত্রায় ভূগর্ভস্থ থেকে বিশুদ্ধ পানি উত্তোলন করে শিল্প কারখানায় ব্যবহার করায় বিশুদ্ধ পানির স্তর দিন দিন নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।  

পানির অপর নাম জীবন হলেও আজ জলাশয়ের সে পানি দিন দিন বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। আর এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। গাজীপুরের প্রাকৃতিক জলাশয়ের বেশিরভাগ পানি দূষিত ও বিষাক্ত। এসব জলাশয়ের দূষিত পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অনেকেই ব্যবহার করলেও তা কতটুকু ক্ষতিকর অথবা উপকারী তা না জেনেই ব্যবহার করছে। এসব পানি শরীরে স্পর্শ করলে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। নদ-নদী ও খাল-বিলের দূষিত পানির দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। নদ-নদী ও খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয় দূষণমুক্ত না করলে এবং পানিপ্রবাহ বাড়ানো না গেলে ভবিষ্যতে বিশুদ্ধ পানির অভাবে গাজীপুরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। শুধু গাজীপুর নয় এর আশপাশ জেলাগুলোর বিভিন্ন জলাশয় দিন দিন দূষিত হচ্ছে।

ভবিষ্যতে বিশুদ্ধ পানির সংকট এড়াতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিশোধন ছাড়া শিল্পকারখানার দূষিত তরলবর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। দূষিত তরলবর্জ্য পরিশোধন করে তা পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানির অপচয় বন্ধ করতে হবে এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যেতে পারে।  

এছাড়া পলিথিন ও বিভিন্ন বর্জ্য ওইসব প্রাকৃতিক জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে। এদিক দিয়েও দূষণ হচ্ছে নদ-নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়। আর নদী-নালা ও খাল-বিলের পানি প্রবাহ ব্যাঘাত ঘটছে। বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলেও একদিকে দূষণের মাত্রা বেড়ে চলে।  

গাজীপুরের কড্ডা বাজার এলাকার বাসিন্দ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কয়েক বছর আগে তুরাগ নদ ও বিভিন্ন খাল-বিলের গোসল করতে পেরেছি। ওইসব জলাশয়ের পানি কৃষি কাজে, কাপড় ধোয়া, গোসলসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পেরেছি। ফলে তেমন ভূগর্ভস্থ পানির প্রয়োজন পড়েনি। অতিমাত্রায় দূষণের ফলে বর্তমানে এসব পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের চাপ বাড়ছে। এতে গভীর নলকূপ ও সাবমারসিবল দিয়ে ভূগর্ভস্থল থেকে পানি উত্তোলন করায় দিন দিন ভূগর্ভস্থলের পানি নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। ফলে এলাকার অনেকের সাবমারসিবল পাম্প অকেজো হয়ে পড়ছে। পরে নতুন করে সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করে পানি উত্তোলন করছে। আর এসব কারণে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাশয়ের পানি ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যতে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট থেকে আমরা রক্ষা পাবো।  

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন বলেন, গাজীপুরের বেশিরভাগ জলাশয় অতিমাত্রায় দূষণের ফলে বিষাক্ত হয়ে গেছে। এসব জলাশয়ে কোনো জলজ প্রাণি নেই বললেই চলে। পয়োবর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য ও শিল্প কারখানার দূষিত তরলবর্জ্য এসব জলাশয় দূষণের অন্যতম কারণ। এসব তরল বর্জ্য সরাসরি জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন শিল্প-কারখানার প্রয়োজনে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির উৎসস্থল নষ্ট হচ্ছে। এসব দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে দ্রুত জলাশয়গুলো দূষণমুক্ত করা প্রয়োজন।

গাজীপুরে চিলাই নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন বলেন, জনগণকে সচেতন করতে আমরা নদ-নদী দূষণ ও দখল রোধে প্রচারণা এবং প্রশাসনকে অবহিত করে থাকি। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া গাজীপুরের বিভিন্ন জলাশয়ে জীববৈচিত্র ও প্রতিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।  

গাজীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. কায়সার মুহাম্মদ মঈনুল হাসান জানান, মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার ৬৫ ভাগ চাষ থেকে এবং প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে ৩৫ ভাগ আসার কথা। কিন্তু জলাশয়গুলো দূষণের কারণে তা কম আসছে। বর্ষাকালে প্রাকৃতিক জলাশয়ে কিছু মাছ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে দূষণের মাত্রা বেশী হওয়ায় তুরাগ নদ ও বালু নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ থাকতে পারে না।  

গাজীপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নয়ন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এসব বিষয়ে সরকার চিন্তা করতেছে শিল্প কারখানার ডাইং ও ওয়াশিং থাকবে কি থাকবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫, মার্চ ২২, ২০২৩।
আরএস/জেএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।