ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুষ দিলেই দেখা করা যায় মানিকগঞ্জ কারাগারের আসামিদের সঙ্গে!

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
ঘুষ দিলেই দেখা করা যায় মানিকগঞ্জ কারাগারের আসামিদের সঙ্গে!

মানিকগঞ্জ: নিয়ম অনুযায়ী মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের বন্দিদের সঙ্গে স্বজনরা দেখা করতে পারেন ১৫ দিনে একবার। কিন্তু কারারক্ষীদের ঘুষ দিলে দিনে দুইবারও দেখা করার সুযোগ মেলে।

অনেকের অভিযোগ, কোভিড-১৯ এর কথা বিবেচনা করে কোনো হাজতি কিংবা কয়েদির সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনরা এমনিতেই ১৫ দিনে একবার দেখা করার সুযোগ পান। এ সময়সীমার বাইরেও চাইলে দেখা করা যায়, যদি কিছু টাকা দেওয়া হয় “ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে” দায়িত্বরত কারারক্ষীদের।

গত কয়েক দিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চিত্র। প্রতিদিন জেলার ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে মানিকগঞ্জ কারাগারে আসে তাদের কারাবন্দি স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। দেখা করতে এসে দিতে হয় ঘুষ, তা না হলে দেখা করাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়েই সাধারণ মানুষ কারারক্ষীদের দুই-তিনশ টাকা দিয়ে দেখা করছেন হাজতি বা কয়েদির সঙ্গে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কারারক্ষীর চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিলে আসামিদের সঙ্গে স্বজনদের একান্তে কথা বলার সুযোগও করে দেওয়া হয়। মানিকগঞ্জের বাইরে থেকে কেউ কারান্তরীণ কারো সঙ্গে দেখা করতে এলে ডিও লেটার লাগবে বলে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে থাকা কারারক্ষীরা ঘুষ নিচ্ছে।

জেলা কারাগারের মূল প্রবেশদ্বারের বাম পাশে ছোট রুমটি হচ্ছে “ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার”। আর এ রুম থেকেই দেওয়া হয় আসামিদের সঙ্গে দেখা করার স্লিপ। রুমটির বাইরে নীল রঙের দেয়ালে সাদা রঙে লেখা “রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’। তার নিচে লাল রঙে লেখা বিনামূল্যে সাক্ষাতের স্লিপ সংগ্রহ করুন, বিনামূল্যে মোবাইল ফোন জমা রাখুন। এমন কি যে কোনো অভিযোগ দেওয়ার জন্য জেলসুপারের সরকারি ফোন নম্বরটি লেখা রয়েছে। তবে সেই নম্বরে কেউ কোনো অভিযোগ করে কি না, বা কেউ কল দিলে কেউ রিসিভ করে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।

মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার ধল্যা এলাকা থেকে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি আমার এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসছি জেলা কারাগারে। দেখা করতে এসে স্লিপ কাটতে গিয়ে শুনলাম আমি দেখা করতে পারব না, কারণ ডিও লেটার নেই। আমি এত কিছু বুঝি না, তখন ওই কাউন্টারের রেজাউল নামে একজন বলেন, কিছু টাকা খরচ করতে হবে, আপনি কি রাজি? পরে দুইশ টাকা দিয়ে আসামির সঙ্গে দেখা করে ফেরার পর আরও একশ টাকা নিল টিপু নামে একজন।  

একই উপজেলার নয়াডিঙ্গী এলাকা থেকে আসা এক নারী বলেন, আমার ভাইকে দেখতে আসছি এ কারাগারে। দেখা করতে এলেই কারারক্ষীদের টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে দেখা করতে পারি না। কোনো খাবার দিতে গেলেও টাকা দিতে হয়, যে টাকার খাবার কিনি, সেই পরিমাণ টাকা দিতে হয় তাদের।  

ঢাকা থেকে আসা আক্কাস মিয়া বলেন, আমার বাড়ি ঢাকার সাভারে। আমি বোনের স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে আসছি মানিকগঞ্জ কারাগারে। স্লিপ কাটতে গেলে তারা (কারারক্ষী) বলে, দুইশ টাকা লাগবে। আমার কাছে ছিল না, পরে আরেকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের দেওয়ার পর দেখা করি।  

এক নারীকে দেখা গেল গেটের বাইরে এক আসামির সঙ্গে দেখা করলেন। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ১৫ দিন ধরে আমি প্রতিদিন সকাল-বিকেল দুইবার কারাগারে আমার স্বামীর সঙ্গে দেখা করি।  

বাইরে দেখা করতে কত টাকা নিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা দিয়া দেখা করছি। পাঁচ হাজার টাকা চাইছিল, তবে আজ তিন হাজার টাকা দিছি।  

টাকা দিলেই কি গেটের বাইরে দেখা করা যায়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দিলাম তো, জিজ্ঞাসা করেন গিয়া।

মানিকগঞ্জ কারাগারের জেলার মোহাম্মদ মাহবুব কবির বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে হাজতি (এখনো সাজা হয়নি) এবং কয়েদিদের (সাজার আদেশপ্রাপ্ত) সঙ্গে স্বজনদের ১৫ দিন অন্তর অন্তর দেখা করার সুযোগ দিয়েছি। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের কারারক্ষীরা টাকার বিনিময়ে ১৫ দিনের মধ্যে একাধিকবার দেখা করার সুয়োগ করে দিচ্ছে কি না, আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে তাদের ধরতে হবে। আমি বিষয়টি জেলসুপার স্যারকে জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ কারাগারের জেলসুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দের সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।