বরিশাল: বাসদের বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেছেন, মাছ-মাংস, চালের স্বাধীনতা চাইলে যদি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, যখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ে তখন কী দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় না?
তিনি প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, রমজানে সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি ন্যায্যমূল্যের দোকান খোলা হয়েছে। কিন্তু বরিশালে এখন পর্যন্ত খোলা হয়নি- এতে কী ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে না? আমাদের শ্রমিকরা যখন বাজারে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসে, তখন কী দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় না?
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বেলা ১২টায় বরিশাল নগরের সদররোডে ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যাটারিচালিত যানবাহনের বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স দেওয়ার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের অনুমোদনের নামে প্রকৃত চালকদের বঞ্চিত করা, বৈষম্য ও হয়রানি বন্ধ করাসহ বরিশাল নগরে চলাচলরত সব ও প্রকৃত চালকদের অনুমোদন দেওয়ার দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, একদিকে শ্রমিকদের ওপর নীপিড়ন চলছে, আরেকদিকে চলছে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তার ওপরে দেখলাম, বরিশাল সিটি করপোরেশন শ্রমিকদের মাঝে শৃঙ্খলার নামে ইজিবাইক নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে।
বাসদ নেতা বলেন, আমরা ১২ বছর ধরে এ আন্দোলন করছি। আমাদের নেতারা এই ব্যাটারিচালিত যানবাহনের লাইসেন্স চাইতে গিয়ে হামলা, নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছেন। এখনো আমাদের নামে ১৮ সালের নির্বাচনের আগে দেওয়া মামলা চলছে। উচ্চ আদালতে যখন ইজিবাইক অবৈধ ঘোষণা হলো, সুপ্রিমকোর্টে আমরা তখন আপিল করে ইজিবাইকের বৈধতার রায় আদায় করেছি।
ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিপদের সময় আপনাদের চেহারা আমরা দেখিনি। বিপদের সময় এই শ্রমিকরা যখন আপনাদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছে, তখন দেখা পায়নি। তারা কালিবাড়ি রোডে গিয়েছে, সিটি করপোরেশনে গিয়েছে, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে। কিন্তু আপনাদের দেখা পাওয়ার সুযোগ তাদের হয়নি। কিন্তু আজ ইজিবাইকের বৈধতার রায় আসার পর এখন শ্রমিকদের বিচ্ছিন্ন করার জন্য নানান প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।
ডা. মনীষা বলেন, প্রথমে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ঘোষণা করা হলো- লাইসেন্স দেওয়া হবে। সাত হাজার শ্রমিককে লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলে তারা স্টিকার দিয়েছে। আমরা তখন বলেছিলাম, বিআরটিএ ছাড়া লাইসেন্স কেউ দিতে পারবে না। আর আমরা সেই নীতিমালা দেখানোর পরে, তারা কথা ঘুরিয়ে ফেলে বললো, লাইসেন্স না অনুমোদন দেব। অনুমোদন দেয়ার নামে তারা ৫ হাজার ফর্ম জমা নিলেন। এখন তারা রাতের বেলা ফোন করে ডেকে লাইসেন্স, অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে। অনুমোদনের কোথাও লাইসেন্স শব্দ ও রুট-পারমিটের বিষয়ে লেখা নাই। সেই লাইসেন্স কাদের দেওয়া হচ্ছে?
তিনি বলেন, কোন ওয়ার্ডে অনুমোদন বিক্রি শুরু হয়েছে? বলা হচ্ছে, টাকা দাও তোমাকে অনুমোদন দিয়ে দেব। এইভাবে পক্ষপাত করে যদি প্রকৃত চালকদের বঞ্চিত করে এইরকম অনুমোদন বাণিজ্য হয়, তাহলে শ্রমিকরা কী মেনে নিতে পারে? প্রকৃত চালকদের বঞ্চিত করে বরিশাল শহরে কোনো শৃঙ্খলা আনা যাবে না। অনুমোদন বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে এখানে যদি কিছু আসে, তাহলে আসবে শুধু বিশৃঙ্খলা, আসবে দ্বন্দ্ব, বিভেদ।
এ সময় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ডা. মনীষা বলেন, ইজিবাইক শ্রমিকদের প্রতি যদি আপনার সহানুভূতি থাকতো, তাহলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনার উচিৎ ছিলো বরিশালে ইজিবাইকের সঙ্গে জড়িত তিনটি সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বসার। তারপর প্রকৃত চালকদের তালিকা নিয়ে যদি সমন্বিতভাবে অনুমোদন দেওয়া, সিরিয়াল নাম্বার দেওয়ার উদ্যোগ নিতেন, তাহলে আপনাকে সাধুবাদ জানাতাম। কিন্তু আপনি রাতের আধারে ফোন করে করে কাদের অনুমোদন দিচ্ছেন? শ্রমিকরা জানতে চায়।
প্রকৃত চালকদের অনুমোদনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। প্রকৃত চালকদের অনুমোদন বঞ্চিত করা হলে এই প্রতিবাদ প্রতিরোধে চলে যাবে, প্রয়োজনে অ্যানেক্স ভবন ঘেরাও হবে। ভোটের আগে এক মাসের অনুমোদন দিয়ে আপনি যদি প্রকৃত শ্রমিকদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করে থাকেন, তাহলে সেই ষড়যন্ত্র কিভাবে প্রতিহত করতে হবে তা শ্রমিকরা দেখিয়ে দেবে, যোগ করেন তিনি।
ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি দুলাল মল্লিকের সভাপতিত্বে এসময় আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মানিক হাওলাদার, দপ্তর সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সদস্য শহীদুল ইসলামসহ শ্রমিক নেতারা।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়, যা নগরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
এমএস/এনএস