ঢাকা: স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে মসৃণ উত্তরণে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ও ইউরোপীয় কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বুধবার (২৯ মার্চ) ব্রাসেলসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা এ প্রতিশ্রুতি দেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কূটনৈতিক সম্পর্কের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তিকালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ও ইউরোপীয় কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে টেকসই ও মসৃণভাবে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জিএসপি রেগুলেশনের র্যাপোর্টিয়ার হেইডি হাউতলা, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিটির (আইএনটিএ) চেয়ার ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য বার্ড ল্যানগে এবং আইএনটিএ-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মনিটরিং গ্রুপের র্যাপোর্টিয়ার ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইউরোপীয় এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক ইস্যুজ বিষয়ক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল, হেলেনা কনিগ এবং এশিয়া-প্যাসিফিক বিষয়ক অ্যাকটিং ম্যানেজিং ডিরেক্টর, পাওলা পাম্পালোনির সঙ্গেও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ যেভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ বাণিজ্য সুবিধাকে যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অর্জন করেছে এবং লাখ লাখ মানুষের জীবনমান পরিবর্তন করেছে সে বিষয়টি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল তুলে ধরেন। বাণিজ্যের বহুমুখীকরণ ছাড়াও বাংলাদেশ যে এখন সার্কুলার অর্থনীতির মাধ্যমে বৃহত্তর টেকসইতা/স্থায়ীত্ব অর্জন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ও সবুজ প্রযুক্তির বর্ধিত ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করছে সে বিষয়গুলোও প্রতিনিধিদল তুলে ধরেন।
তারা আরও জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার নিজস্ব জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছে।
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চলমান বাহ্যিক অস্থিরতা, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর আরও ছয় বছরের জন্য ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট মেজারস (আইএসএম) অব্যাহত রাখার আলোচনায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় দৃঢ় সমর্থন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অনুরোধ করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আলোচনাধীন নতুন জিএসপিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য স্বার্থ, বিশেষ করে পোশাক খাতের সুরক্ষা দেওয়ারও অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। কোম্পানি এবং ব্র্যান্ডগুলোর পক্ষ থেকে ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রাসঙ্গিক কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্সের আওতায় একটি মেকানিজম তৈরির অনুরোধও করা হয়।
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনন্য মানবিক ভূমিকার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রশংসা করে।
সরকারি-বেসরকারি খাতের সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ব্রাসেলসে তিন দিনের সফরে রয়েছেন। তার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) সভাপতি নিহাদ কবির এবং বাংলাদেশ এমপ্লোয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ও সিইও ফারুক আহমেদ। দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বৈঠকে অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
এমইউএম/আরবি