ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ছাদ থেকে ফেলে কিশোরী বধূকে হত্যাচেষ্টা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৩
ছাদ থেকে ফেলে কিশোরী বধূকে হত্যাচেষ্টা

বরিশাল: বরিশালে বিয়ের সাত মাসের মাথায় যৌতুকের দাবিতে কিশোরী বধূকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাত ৯টার দিকে বরিশাল নগরের রুপাতলী হাউজিং এলাকার ২২ নং সড়কের সারা-জারা ভবনের সামনে থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

কিশোরী বধূর নাম জান্নাতুল ফেরদৌসি। নগরের রুপাতলী শেরেবাংলা সড়কের দিনমজুর রিপন হাওলাদারের মেয়ে সে। তার বয়স ১৪-১৫ বছর হবে বলে দাবি করেছেন স্বজনরা।

অভিযুক্ত স্বামীর নাম রাকিব হোসেন। পেশায় অটোরিকশাচালক, রুপাতলী ভাসানী সড়কের বাসিন্দা তিনি।  

কিশোরীর মা নুপুর বেগম জানান, তার মেয়ে রুপাতলী এলাকার এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। সাত মাস আগে অটোরিকশাচালক রাকিব হোসেনের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করে সে। মেয়ে নিখোঁজের পর থানায় জিডিও করেন তিনি। পরে ছেলের বাবা বিয়ের বিষয়টি জানিয়ে মীমাংসা করেন।  

নুপুর বেগম বলেন, মেয়ে ভাসানী সড়কের স্বামীর বাসায় থাকতো। দুই মাস আগে মেয়েকে বাসায় দিয়ে যায় তার স্বামী রাকিব। তখন বলে দুই লাখ টাকার ফার্নিচার দিয়ে মেয়েকে পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় মেয়েকে না পাঠানোর সিদ্বান্ত নিই। কিন্তু কয়েকদিন আগে ফের রাকিবের কাছে চলে যায় আমার মেয়ে। এরপর আর মেয়ের খোঁজ নিইনি।

নুপুর বেগম আরও বলেন, রাত ১০টার দিকে এক লোক আমাকে হাসপাতালে আসতে বলে। হাসপাতালে গেলে মেয়ে শুধু এটুকুই আমাকে বলেছে, তার স্বামী তাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে।  

একই কথা জানিয়ে কিশোরী বধূর বাবা রিপন হাওলাদার বলেন, যৌতুকের দাবিতে জামাই, শাশুড়ি ও ননদ খুব মারধর করতো। তারাই আমার মেয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। কীভাবে ও কয় তলা থেকে ফেলেছে, সেই কথা মেয়ে কিছুই বলতে পারেনি।

এদিকে ঘটনাস্থল রুপাতলী হাউজিংয়ের ২২ নং সড়কের সারা-জারা ভবনে গিয়েও সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।  

কিশোরী বধূকে উদ্ধার করা ওই ভবনের প্রতিবেশি মো. নিজাম বলেন, আমি নামাজ পড়তে বের হব। হঠাৎ করে উপর থেকে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পাই। পরে দেখি ভবনের সামনে রাস্তায় কিছু পড়ে আছে। চিৎকার শুনে কাছে গিয়ে দেখি অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ - এ কল করে অ্যাম্বুলেন্স এনে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।

পাঁচতলা সারা-জারা ভবনের মালিক স্বপন সরদার জানিয়ে তার ছেলে মেহেদি বলেন, মেয়েটি কীভাবে এখানে এলো বা কয়তলা ছাদ থেকে তাকে ফেলা হয়েছে তার কিছুই বলতে পারছি না।

এ সময় ঘটনাস্থলে আসা কোতয়ালি মডেল থানার এসআই জোবায়ের বলেন, কি ঘটেছে তা জানার জন্য এসেছি। প্রকৃত ঘটনা এখনো জানতে পারিনি।

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুর বিভাগের চিকিৎসক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ওপর থেকে পড়ে যাওয়ায় দুই পা ভেঙে হাড় বের হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও মাথায় আঘাত পেয়েছে মেয়েটি। পা ভেঙে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালের
মহিলা অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে।  

তার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানান চিকিৎসকরা।

মহিলা অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডের সেবিকা তমালিকা হালদার বলেন, অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে আসা হয় ওই কিশোরীকে। এখানের আনা পর জ্ঞান ফিরেছিল। তখন সে জানিয়েছে, তার স্বামী ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। এর বেশি সে কিছু বলতে পারেনি।

কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী বলেন, মেয়েটি সুস্থ না হলে কি ঘটনা ঘটেছিলো বলতে পারবো না। পরিবারের পক্ষ থেকে পরিস্কার কিছু জানাতে পারছে না। মেয়েটিকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো। সেটা নিশ্চিত বলা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।