ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আমানতের ১০৫ কোটি টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২৩
আমানতের ১০৫ কোটি টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের অবৈধ ও অনিবন্ধিত ভুয়া এনজিও মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় সারা জীবনের কষ্টার্জিত আমানতের টাকা আটকে যাওয়ায় তা ফেরত পেতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এনজিওটির বিভিন্ন শাখার কর্মচারীরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এতে অংশ নেন।

এ সময় টাকা ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।  

রোববার (০২ এপ্রিল) বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।

ভুক্তোভোগী সাধারণ গ্রাহকদের ব্যানারে প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের আমানতের ১০৫ কোটি টাকা ফেরতের দাবিতে এক হাজার ভুক্তোভোগী গ্রাহক মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এ সময় মধুমতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদের হাত থেকে মুক্তি পেতে ও সারা জীবনের কষ্টে অর্জিত টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানানো হয়। গ্রাহকরা এ সময় মধুমতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড পরিদর্শন করেন। মানববন্ধন থেকে মাসুদের পরিবার জনগণের টাকা সরিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের নামে যে সম্পদ তৈরি করেছে তার সমালোচনা করা হয়।
মানববন্ধনে মধুমতি এনজিওর শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর শাখার কর্মচারী পলি বেগম বলেন, আমি মধুমতির অফিসে রান্নার কাজ করতাম। সেখান থেকে পাওয়া বেতনের টাকাগুলো উঠাতাম না। পরিবার ও ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ও সংসারের কাজে লাগাতে টাকাগুলো জমা রেখেছিলাম। জমা হয়ে মোট ৬৫ হাজার টাকা হয়েছিল। শত কষ্টের মধ্যেও টাকা উত্তোলন করিনি। কিন্তু সেই টাকাও এখন পাচ্ছি না।

সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের স্নাতক পড়ুয়া লতিফা খাতুন বলেন, আমার কোনো ভাই নেই। বাবার উপার্জনের ৬ লাখ টাকা মধুমতি এনজিও-তে জমা রেখেছিলাম। কিন্তু বাবা অসুস্থ হওয়ার পরেও এখন চিকিৎসা করার জন্য টাকা উত্তোলন করতে পারছি না। টাকার জন্য এখন অসহায় দিনযাপন করছি।

একই উপজেলার কালিনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নাইমুল হক বলেন, মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা জেলাজুড়ে ৪৬টি শাখায় অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সাধারণ জনগণকে এক লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে ১২০০ টাকা লাভ দেওয়া হবে এবং জমাকৃত টাকা চাওয়া মাত্র ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে মধুমতি নামের এ অবৈধ এনজিও। এভাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে সে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সময় পার করছে।  

অন্যদিকে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা স্বেচ্ছায় অস্ত্রসহ আটক হয়ে জেলে বসে নাটক করছেন।

এমডি মাসুদ রানা স্বেচ্ছায় জেলে থাকলেও জামিনে মুক্তি চান না দাবি করে ভুক্তভোগী শামীম আলী বলেন, আটকের পর থেকে জেল থেকে প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তার আটকের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের পুরো লেনদেন এবং দৈনিক হিসাব-নিকাশের অনলাইন সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ৫ মাস থেকে লাভ প্রদানসহ আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ রয়েছে। অথচ জনগণের টাকা নিয়ে মাসুদ রানা ও তার পরিবারের স্বজনরা টাকার পাহাড় গড়েছেন। তার আটকের পর থেকেই পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছেন। জেলার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের টাকায় ফ্ল্যাট-বাড়িসহ সম্পদ গড়েছেন।

টাকা হারিয়ে ৭ জন গ্রাহকের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, মাসুদ রানা আটকের পর মধুমতি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মাসুদ রানার স্ত্রী মোসা. মাহমুদা খাতুন পলাতক রয়েছেন। সেই সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মধুমতির অর্থ, গাড়ি ও কলকারখানার মেশিন। এমডি আটকের পর সব দায়-দায়িত্ব চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুন এবং মাসুদ রানার ভাই ও মধুমতির ফ্যাক্টরি পরিচালক ফারুক হোসেনের নেওয়ার কথা থাকলেও তারা গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতে লিপ্ত। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ, আদালতে গ্রাহকরা কয়েকটি মামলা দায়ের করলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

এসময় আরও উপস্থিত গ্রাহক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেলশাদ আলী, নইমুদ্দিন, সলেহা বেগম, আকলিমা বেগমসহ প্রায় এক হাজার গ্রাহক।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ভুক্তভোগী ৩৫ হাজার পরিবারের কষ্টের সব টাকা ফেরতের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বারবার স্মারকলিপি প্রদান করেন এনজিওটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি-এমআরএ'র অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ। মধুমতির বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতে মামলা চলমান আছে। আমরা তার সব সম্পদ পর্যালোচনা করে গ্রাহকদের জামানতের অর্থ ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি।

এর আগে গত ০৯ মার্চ শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে একই এনজিওর বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও ইউএনওকে অভিযোগ দেওয়া হলেও এর সমাধান হয়নি।

প্রসঙ্গত মধুমতি এনজিও এর অর্থ লেনদেন বা আমানত সংগ্রহের জন্য কোনো নিবন্ধন না থাকলেও সমবায় অধিদপ্তর থেকে পাওয়া একটি নিবন্ধন গত ডিসেম্বরে শর্ত ভাঙার অভিযোগে বাতিল করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর প্রায় ৩ মাস পর গোমস্তাপুর থানা পুলিশের হাতে নাটকীয়ভাবে অস্ত্রসহ আটক হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।