ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড

‘ভাই গো, পুরা শেষ হয়ে গেছি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২৩
‘ভাই গো, পুরা শেষ হয়ে গেছি’ ভাড়া বাসায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দোকান মালিক বিল্লাল হোসেন।

ঢাকা: বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩টি দোকানে থাকা ৮০ লাখ টাকার মালামাল এখন পোড়া ছাই। এ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক দোকান মালিকের মধ্যে চাঁদপুর স্টোর নামে তিনটি দোকানের মালিক মো. বিল্লাল হোসেন।

নীচ তলায় থাকা দুটি দোকানের নম্বর ৮৪৩ ও ৮৪৪। আর দ্বিতীয় তলায় ছিল ৯৩৩ নম্বর দোকানটি।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোরে বঙ্গবাজার মার্কেটে সংঘঠিত অগ্নিকাণ্ডে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের দোকানের পাশাপাশি চাঁদপুর স্টোর নামের তিনটি দোকানের মালামাল সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

আগুনে সব শেষ হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিকেলের দিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দোকান মালিক বিল্লাল হোসেনকে ঘটনাস্থল থেকে তার পরিবারের লোকজন এক প্রকার জোর করেই খিলগাঁওয়ে তার বাসায় নিয়ে যায়।

‘ভাই গো, পুরা শেষ হয়ে গেছি’ বলে অস্ফুট চিৎকার দিয়ে বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তিনটি দোকানের প্রায় ৮০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কিছুদিন আগেও ১৫ লাখ টাকার মাল উঠিয়েছি। ঈদকে সামনে রেখে জমি বেচার টাকা ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই মালগুলো উঠিয়েছিলাম। আমার দোকানটি হোলসেলের দোকান। তিন দোকানের ৮০ লাখ টাকার মালামাল সব এই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে মালামালগুলো এখন পোড়া টুকরা।

সকালেই আগুনের সংবাদে পাগলের মতন ছুটি যাই বঙ্গবাজার মার্কেটে। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে, আহাজারির সুরে যোগ করেন তিনি।

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এই দোকান মালিক বলেন, তখন আনুমানিক সকাল ৭টা বা সোয়া ৭টা বাজে। দেখলাম, আমার দোকানের সামনে দুটি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। তাদের অনুরোধ করলাম, ভাই তাড়াতাড়ি পানি ছিটান। উত্তরে তারা বলে পানি শেষ! তারপরে নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়ে চেষ্টা করলাম। নিচ তলার দোকান থেকে কিছু মালামাল বের করার জন্য, কিন্তু পারলাম না! তখন চোখের সামনে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।

বিল্লাল হোসেন আরও বলেন, আমি শেষ হয়ে গেলাম, আমার আর কিছুই রইল না! কয়েক বছর ধরে করোনার ধকল ছিল। পাশাপাশি এই বছরটা ব্যবসায়ীরা একটু টার্গেট করেছিল, কিছু মুনাফা করার জন্য। তাদের মতো আমিও সর্বশান্ত হয়ে গেছি, কিছুই রইল না আমার!

এর আগে, মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত হয়। বঙ্গবাজার থেকে আশপাশের আরও চারটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, ৬৫০ জন জনবল নিয়ে ৪৮টি ইউনিট বেশ কয়েক ঘণ্টা কাজ করে বঙ্গবাজার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজারের কয়েকটি মার্কেটের প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে দোকান মালিক সমিতি। তারা বলছেন, এ ঘটনায় দুই হাজার কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। কয়েক হাজার ব্যবসায়ী সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।  

একই সঙ্গে ঈদের আগেই এসব মার্কেটে কর্মরত অর্ধ লাখ কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ার এবং বেতন না পাওয়ার শঙ্কা কাজ করছে।  

এদিকে, রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা, আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে বিজিবির জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২৩
এজেডএস/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।