ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সড়ক বাতি নেই, তবুও নগর করের সঙ্গে দিতে হচ্ছে বিল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২৩
সড়ক বাতি নেই, তবুও নগর করের সঙ্গে দিতে হচ্ছে বিল

বরিশাল: সিটি করপোরেশনের সড়কে নেই কোনো বৈদ্যুতিক বাতি, কোনো বৈদ্যুতিক ল্যাম্প পোস্টই নেই। তারপরও নগর করের বিলের মধ্যে প্রতি অর্থ বছরে আসছে ‘সড়ক বাতির রেট’ বাবদ বিল।

 

বরিশাল নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের জাগুয়া এলাকার চর জাগুয়া সড়কের বাসিন্দাদের এ বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ৪০টির মতো পরিবার এ নিয়ে বার বার নগর ভবন কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।

সিটি করপোরেশনের সড়ক বাতি না থাকা এ এলাকাটিতে রাতের বেলা টর্চের আলো জ্বালিয়ে চলাফেরা করতে হয় বাসিন্দাদের। কিন্তু বছর শেষে বিল ভরতে হয় সড়ক বাতির।

ওই এলাকার ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ মো. জব্বার হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা হয়েও যেন ছিটমহলে বসবাস করছি। মূল শহরের থেকে বিচ্ছিন্ন সুগন্ধা নদীর তীরে আমরা যে ৪০টি পরিবার আছি, তাদের চারদিকে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠি গ্রাম, শুধু মধ্যখানে আমরা।

এ বিলের পরিমাণ কম হলেও স্থানীয়দের কাছে এটাই অনেক কিছু। তিনি জানান, তার এলাকার বেশিরভাগই ক্ষুদ্র শ্রেণি-পেশাজীবী।  

এ বৃদ্ধ বলেন, আমাদের আয়-রোজগার কম, ফলে প্রতিটি টাকাই মূল্যবান। এখানে ভোট না হলে জনপ্রতিনিধিরা আসেন না, আমাদের কোন সুবিধা-অসুবিধা দেখেন না।  এই যে নগর করের বিলের সঙ্গে ‘সড়ক বাতির রেট’ বাবদ বিল দিচ্ছি প্রতিবছর। কিন্তু আমাদের এখানে তো  সিটি করপোরেশনের কোন বৈদ্যুতিক ল্যাম্প পোস্ট কিংবা বৈদ্যুতিক বাতিই নেই। আর থাকবেও বা কীভাবে, আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি তার পুরোটাই তো নলছিটি থেকে নেওয়া। এমনকি মাসিক বিদ্যুৎবিলও দিচ্ছি নলছিটিকে।  এখানে তো সিটি করপোরেশনের বিদ্যুতের লাইনই নেই, তাহলে বাতি দেবে কীভাবে?

 একই এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় তিন কিলোমিটারের চরজাগুয়া সড়কটা সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ করে গিয়েছিল। এরপর দুই মেয়রের আমল শেষ হলো কিন্তু কেউ সড়কটা সংস্কার বা উন্নয়নে কাজ করেনি। নলছিটির কুমারখালী বাজার থেকে সুগন্ধা নদীর তীর পর্যন্ত গোটা সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে খোয়ার স্তর বের হয়ে রয়েছে। আবার বিভিন্ন জায়গায় মাটি দেবে গর্তও হয়ে গেছে। রাতের বেলা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয় ঝুঁকি আর আতঙ্ক নিয়ে।  কারণ একে তো ভাঙাচোরা সড়ক তার ওপর নেই কোনো বাতি।  অথচ সর্বশেষ অর্থবছরেও নগর করের বিলের মধ্যে ‘সড়ক বাতির রেট’ বাবদ ৬০ টাকা দিয়েছি।  এই ৬০ টাকাই তো আমাদের পকেট কাটার সামিল।

এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এটা সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।  

সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করনেনি।

তবে কর ধার্য শাখার সাবেক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের যে সেবা নগরবাসী পাচ্ছেন না, সেই সেবা বাবদ অর্থ নেওয়া না নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করে নির্বাচিত পরিষদের ওপর। তবে চরজাগুয়ায় ‘সড়ক বাতির রেট বাবদ নেওয়া টাকার বিষয়টি বিগত মেয়রদের আমল থেকেই হয়ে আসছে। বর্তমান পরিষদ এ নিয়ে তেমন কোন মাথা ব্যাথা করেনি।

তবে চর জাগুয়ার স্থানীয় বাসিন্দা রেকসোনা বেগম বলেন, আমাদের এখানে তো আগে কোনো বিদ্যুতের লাইনই ছিলো না।  আমাদের ঠিকানা বরিশাল হওয়ায় নলছিটি থেকে বৈদ্যুতিক মিটারের সংযোগও আনতে পারতাম না। যাদের ক্ষমতা ছিলো তারা অন্যের বাড়ি থেকে বিদ্যুতের লাইন এনে ব্যবহার করতো।  তবে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ হওয়ার পর এই এলাকায় নলছিটি থেকেই বিদ্যুতের খুটি-তার ও সংযোগ এসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।