ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রমনায় বোমা হামলা: ২২ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৩
রমনায় বোমা হামলা: ২২ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার

ঢাকা: ২০০১ সালে রাজধানীর রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় ঘটে। এ ঘটনায় ওই সময় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

হত্যা মামলাটি ২০১৪ সালে রায় ঘোষণা করা হলেও বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটি এখনও নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। মামলার কার্যক্রম কবে নাগাদ হাইকোর্টের গণ্ডি পেরোবে হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।

২২ বছর আগে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ১০ জন। এ ঘটনায় করা দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে ঢাকার বিচারিক আদালতে। তবে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের আরেকটি মামলার বিচার এখনও শেষ হয়নি। মামলাটিতে ৮৪ জনের মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলায় আগামী ১৭ মে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। মামলাটি ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।  

ওই আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌশলী মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ সচেষ্ট। আমরা আশা করছি, দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি হবে। ৯ বছর আগে রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলায় আট জঙ্গির ফাঁসি আর ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও জেল আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে সকালে একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ হয়। এর ১০-১৫ মিনিট পর আরেকটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে মারা যান একজন। আর আহত হন ২০ থেকে ২৫ জন। এ ঘটনায় পুলিশ রমনা থানায় পৃথক দুটি মামলা করে।

এ বোমা হামলা মামলায় হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আটজন জঙ্গির ফাঁসির দণ্ড দেন বিচারিক আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন- মুফতি হান্নান (অন্য একটি মামলায় ফাঁসি কার্যকর), মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলাল উদ্দিন, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা তাজউদ্দিন (সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই) ও হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর বদর। তাদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম ও মুফতি আবদুল হাই পলাতক।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় জঙ্গি হলেন- হাফেজ আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ ও শাহাদাত উল্লা ওরফে জুয়েল। দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১৪ জঙ্গির মধ্যে শাহাদাত উল্লা ছাড়া অন্যরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজি-বির শীর্ষস্থানীয় নেতা।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিলেন, বাঙালি জাতির ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। ২০০১ সালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষ। এ অনুষ্ঠান কোনো নির্দিষ্ট দল-মত-গোষ্ঠী বা ধর্মের লোকজন ছিল না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ ওই অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছিল। ওইদিন ভোরে ঘটনাস্থলে দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল এবং পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে বিশেষজ্ঞদের মত। বোমা হামলাকারীদের লক্ষ্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ছিল না। আয়োজক সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। অথচ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আতঙ্ক সৃষ্টি করাসহ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে কলুষিত তথা সংস্কৃতির চর্চা বন্ধ করার জন্য বোমা হামলা করেছিলেন আসামিরা।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে সকালে একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ হয়। এর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর আরেকটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু ও হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও একজন। এতে আহত হন ২০ থেকে ২৫ জন। এ ঘটনায় রমনা থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।