ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চেয়ারম্যানের সামনেই ছিনতাই হলো ১২ বস্তা ভিজিএফের চাল!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩
চেয়ারম্যানের সামনেই ছিনতাই হলো ১২ বস্তা ভিজিএফের চাল!

লালমনিরহাট: ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে চেয়ারম্যানের সামনেই ৩৬ জন দুস্থ পরিবারের ১২ বস্তা (৩০ কেজি বস্তা) ভিজিএফের চাল ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

রোববার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এ বছরও দুস্থ অসহায় পরিবারের জন্য বিশেষ ভিজিএফ চাল বিতরণ করে সরকার। এজন্য সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করে জনপ্রতি ১০ কেজি হারে চাল বিতরণ করা হয়।

ইউনিয়ন পরিষদে এসব সুবিধাভোগীর তালিকা প্রণয়ন করার কথা থাকলেও এসব তালিকার ভাগ চলে যায় কয়েকটি স্তরে। যেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান, এমপি ও ক্ষমতাশীল দলের নেতারা ভাগ করে নিয়ে তালিকা বা স্লিপ প্রদান করছেন। এই স্লিপ ভাগ বন্টন নিয়েও দফায় দফায় মিটিং চলে উপজেলা কমিটিতে।

সব মিলিয়ে তালিকা প্রণয়ন হলেও আদিতমারী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে শুধু ইউনিয়ন পরিষদ ও ভাইস চেয়ারম্যানের অংশের ভিজিএফ স্লিপধারী সুফল ভোগীদের মাঝে রোববার দিনব্যাপী বিতরণ করা হয়। বাকি উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি ও দলীয় অংশের স্লিপের চাল সোমবার স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের বিতরণ করা হবে।

রোববার (১৬ এপ্রিল) মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের তালিকা ও ইউনিয়ন পরিষদের তালিকাভুক্ত সুফলভোগীদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের তালিকাভুক্তদের পর ভাইস চেয়ারম্যানের ৩৬ জনের মধ্য থেকে গোবিন্দ রায় নামে একজনের স্বাক্ষর নিয়ে ১২টি বস্তা উত্তোলন দেখানো হয়। স্বাক্ষর করা মাত্রই চালের বস্তাগুলো টেনে ছিনিয়ে নেন স্থানীয় চাল বিক্রেতা আব্দুল আহাদ ও ইউপি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আলমগীর হোসেন। এসময় চেয়ারম্যান কোনো প্রতিকার করেননি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

চাল না পেয়ে স্লিপ আর খালি বস্তা নিয়ে বঞ্চিত ৩৬ জন দুস্থ উপজেলা পরিষদে এসে ভাইস চেয়ারম্যানকে অবগত করে প্রতিকার দাবি করেন।

ভুক্তভোগী উপেন্দ্রনাথ ও কসুল্লা রানী বলেন, প্রথম দিকে ৩টা স্লিপ দিয়ে এক বস্তা চাল দিতে চেয়ারম্যান আমাদের ১২জনকে ডাকেন। পরে চেয়ারম্যানের গাড়িচালক বলেন ৩৬ জনকেই লাগবে। তবুও ৩৬ জনের মধ্য থেকে একজনের স্বাক্ষর নিয়ে ১২ বস্তা চাল গুদাম থেকে বের করা মাত্রই চেয়ারম্যানের ড্রাইভার আলমগীর আর আহাদ কেড়ে নিয়ে যায়। পরে চেয়ারম্যান বলেন ‘চাল দিয়েছি তোমরা রাখতে পারনি। সেটা আমার দোষ না’।

মহিষখোচা ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, তারা স্লিপ পাঠালেও লোক পাঠাতে পারেনি। তবুও ভাইস চেয়ারম্যানের প্রতিনিধির হাতে ১২ বস্তা বুঝিয়ে দিয়েছি। তাদের সামনে চালের বস্তাগুলো নিয়ে গেছে। ভেবেছি তারা বিক্রি করেছে হয়তো। বঞ্চিত হলেও তাদের দেওয়ার মতো চাল আমার কাছে আর নেই।

মহিষখোচা ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমি যতক্ষণ ছিলাম সেসময় এমন ঘটনা ঘটেনি। অসুস্থ থাকায় বিতরণ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই চলে এসেছি।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন আক্তার বলেন, আমার সুপারিশের হলেও ইউনিয়ন পরিষদের তালিকাভুক্ত এবং রেজুলেশনভুক্ত সুফলভোগী, তাদের স্বাক্ষর নিয়ে চালের বস্তা গায়েব করা হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ সবাইকে অবগত করা হচ্ছে। তদন্ত করে প্রতিকার দাবি করেন তিনি।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিআর সারোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ২১ হাজারের বেশি পরিবারকে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ডিসি অফিসে মিটিংয়ে থাকায় সুফলভোগীদের চাল ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানতে পারি নি। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।