ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চোখে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
চোখে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন

ঢাকা: বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসার সময়েই সব হারিয়েছেন তারা। দোকানভর্তি লাখ লাখ টাকার মালামাল আর নগদ টাকা পুড়ে ছাই।

চোখের সামনেই শেষ হয়ে যেতে দেখেছেন নিজেদের স্বপ্ন। বলছি রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কথা।

অগ্নিকাণ্ডের একদিন পর ব্যবসায়ীরা নিজের দোকানে ঢুকে পোড়া কাপড়ের স্তূপ দেখে ভেঙে পড়েন অনেকেই। এরমধ্যেই হাত লাগান নিজ নিজ দোকান পরিষ্কারে। যেন কোটি টাকার মালামাল একদিনের ব্যবধানেই এখন আবর্জনা।  

চোখ মুছতে মুছতে পোড়া আসবাব আর কাপড়ের সেই আবর্জনা তারা ছুড়ে ফেলছিলেন নিচে। আর বলছিলেন তাদের যেন দ্রুতই ব্যবসা করার পরিবেশ করে দেওয়া হয়। সব শেষ হয়ে গেলেও তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে চান।

রোববার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের আগুন পুরোপুরি নির্বাপণের পর মার্কেটে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা। এরপর মার্কেট বুঝিয়ে দেন কর্তৃপক্ষের কাছে। পরে বাইরে অপেক্ষারত ব্যবসায়ীরা যার যার দোকানে প্রবেশ করেন।

দোকানে প্রবেশ করে যে যার দোকানের আসবাব ও কাপড়ের পোড়া স্তূপ পরিষ্কার শুরু করেন। যদিও পুড়ে যাওয়া দোকানগুলো পুনরায় ব্যবসার উপযোগী করা এবং নতুন করে মালামাল তোলার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।

তারপরও ব্যবসায়ীরা চান যত দ্রুত সম্ভব ব্যবসায় ফিরে যেতে। তারা বলছেন, যত দ্রুত ব্যবসা শুরু করা যাবে, তত দ্রুতই নিজেদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিউ সুপার মার্কেটে তৃতীয় তলায় ৩৫০টির বেশি দোকান ছিল, যেগুলোর প্রায় সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় ও নিচতলার দোকানগুলো সাধারণত পানি ও ধোঁয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার দোকান থেকে অনেক মালামালই সরিয়ে নিতে পেরেছেন ব্যবসায়ীরা।

নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় শার্ট-প্যান্টের দোকান ছিল তৌহিদের। ঈদ উপলক্ষে দোকানে ৫০ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন। সবশেষ দুদিনে মালামাল বিক্রির প্রায় পাঁচ লাখ টাকাও ছিল দোকানে। যার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।

তৌহিদ নামের ওই ব্যবসায়ী বলেন, ঈদ উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ঋণ করে মালামাল উঠিয়েছিলাম, এখন সব ছাই। এমন সময় আগুন লেগেছে, যখন আমরা কেউ ছিলাম না। আমরা থাকলে মালামাল না হলেও অন্তত ক্যাশ টাকাটা রক্ষা করতে পারতাম।

রায়হান নামে আরেক দোকানি বলেন, সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয় এই ঈদে। ঈদের কেনাবেচার জন্য সবাই সর্বোচ্চ পরিমাণে মালামাল তুলেছিলেন। নিজের কাছে নগদ টাকা না থাকলে ধার করে হলেও মালামাল তুলেছেন সবাই।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে জমে উঠেছিল ঈদের বাজার। এরমধ্যে হঠাৎ এই আগুনে আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সামনের দিনে কীভাবে চলব আর কীভাবে ধার শোধ করব, তার ঠিক নেই।

তিনি আরও বলেন, তবে আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। যা যাওয়ার তা গেছেই। এখন দ্রুততম সময়ে যদি মার্কেটটা সংস্কার করে আমাদের ব্যবসায়িক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা অন্তত বেঁচে থাকতে পারবো। আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

শাহ আলম নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ঈদ উপলক্ষে যা মালামাল তুলেছি, তার অর্ধেকই ঋণ করে আনা। আসল তো গেলোই, ঋণের টাকাও গেলো। এক টাকার মালামাল অবশিষ্ট নেই। এখন তাড়াতাড়ি আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া হলেই আমরা উপকৃত হবো।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে ব্যবসা একদিন বন্ধ থাকলেই কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এরমধ্যে এখন ব্যবসা শুধু বন্ধই হয়নি, দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দ্রুততম সময়ে তাদের আবার পরিবেশ তৈরি করে ব্যবসা শুরু না করতে দিলে তাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। এ অবস্থায় তারা সিটি করপোরেশন ও দোকান মালিক সমিতির কাছে দ্রুত ব্যবসায়িক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

এদিন বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা যার যার দোকান থেকে পোড়া আসবাব ও কাপড়ের স্তূপ ভবনের নিচে ফেলছিলেন। আর সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে সেই আবর্জনা সরিয়ে নিচ্ছিল।

শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। ৫টা ৪৩ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের টিম পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।  

পরে পর্যায়ক্রমে একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি, বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা স্বাভাবিকসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন র‍্যাব ও পুলিশের সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
পিএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।