ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহীতে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু, বৃষ্টির জন্য হাহাকার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
রাজশাহীতে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু, বৃষ্টির জন্য হাহাকার

রাজশাহী: রাজশাহীর চলমান তাপপ্রবাহ অতি তীব্র হয়েছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ এবং গেল ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০০৫ সালের ১২ জুন রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর রাজশাহীর তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেনি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।

তাপপ্রবাহ সাধারণত ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকেই শুরু হয়। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বলা হয় মৃদু তাপপ্রবাহ। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। এছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপরে উঠলেই তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। ফলে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে রাজশাহী।

মাঝখানে একদিন বিরতি দিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে রাজশাহীর তাপমাত্রা রয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। টানা তাপদাহে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। পশু-পাখিরাও এখন গরমে কষ্ট পাচ্ছে। বাতাসের আর্দ্রতা কমে আসায় মানুষের শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই তীব্র গরমেও ঠোঁট এবং হাত-পা ফাটছে মানুষের। অসুস্থও হয়ে পড়ছে সব বয়সের মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এই তাপপ্রবাহের মধ্য বেশি অসুস্থ হচ্ছেন।

এক সপ্তাহ আগ থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল রাজশাহীর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াবে। আগামীতে তাপদাহ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে রাজশাহীতে এবার ৫১ বছরের রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- এর আগে ২০০৫ সালের ১২ জুন রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পর ২০১৪ সালের ২১ মে উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এবং ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল উঠেছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর দীর্ঘ আট বছর পর ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ আবারও পুরনো রেকর্ড ভাঙে। ওই দিন বেলা ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন পর্যন্ত এই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর অতিক্রম করেনি উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে।

এছাড়া ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে দেশের মধ্যে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর পর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত আগের সেই রেকর্ড ভাঙেনি।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজীব খান জানান, গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৩ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ১৪ এপ্রিল রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৫ এপ্রিল ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ১৬ এপ্রিল ছিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ ১৭ এপ্রিল বেলা ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত এটি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

মাঝখানে শুধু ১৫ এপ্রিল বাদে গত পাঁচ দিন থেকে রাজশাহী তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই ছিল। তবে আজ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে এটি অতি তীব্র তাপপ্রবাহের রূপ নিল। এর আগে গত ৪ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হয় রাজশাহী অঞ্চলে। এরপর মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। আজ তা অতি তীব্র হলো। বৃষ্টি না হলে এই তাপপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, ২০০৫ সালের পর রাজশাহীর তাপমাত্রা আজ আবারও ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলো। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের থেকে দেওয়া আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে, তবে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু'এক জায়গায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া রাজশাহী, খুলনাসহ ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও পাবনা জেলাসমূহের ওপর দিয়ে যে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।